হাসিনা বেগমের জীবন যেন এক সংগ্রামের গল্প
কুয়াশা আর ঠান্ডার মাঝেও থেমে নেই হাসিনা বেগমের জীবন সংগ্রামের চাকা। বাগেরহাটের কাটাখালি মোড়ে রাস্তার পাশে বসে চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা ও ডিম বিক্রি করে নিজের খরচ চালাচ্ছেন তিনি। হাসিনা বেগমের জীবন যেন শীতকালীন পিঠার গন্ধে জড়ানো এক সংগ্রামের গল্প।
দেড় যুগ আগে স্বামীকে হারানোর পর থেকে হাসিনা বেগম জীবনযুদ্ধে নামেন। গ্রামের বাড়ি থেকে শহরে এসে নোওয়াপাড়ার একটি ভাড়া বাসায় সন্তানদের নিয়ে থাকেন। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি কাটাখালি মোড়ে ডিম ও পিঠা বিক্রি করছেন। দিনে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করে সংসার চালান।
হাসিনা বেগম বলেন, দেড় যুগ আগে স্বামীকে হারিয়ে দুই বাচ্চা নিয়ে শহরে চলে আসি। তখন থেকে সংসারের হাল ধরতে হয়। এখন এই কাটাখালি মোড়ে ডিম আর পিঠা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে আর ছেলেকে বিয়ে দিয়েছি, কিন্তু তারা কেউ আমার খবর নেয় না। অসুখ-বিসুখ আর সংসারের সবকিছুই এই আয়ে টানতে হয়। শীতকালে মানুষ পিঠা খেতে ভালোবাসে বলে ভাপা আর ডিম বিক্রি করি। কোনো দিন বিক্রি ভালো হয়, কোনো দিন কম। তবে এভাবেই সংসার চালাতে হয়।
একই এলাকায় পিঠা বিক্রি করেন জয়নাল উদ্দিন। তিনি বলেন, শীতকাল এলেই পিঠা বিক্রি শুরু করি। অন্য সময়ে ফলমূল বিক্রি করি। শীতের সময় পিঠা বিক্রির চাহিদা বেশি থাকে। দিনে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়। সংসার চালানো তো কঠিন, তবে এই পিঠার ব্যবসা না করলে অন্য উপায় থাকতো না।
পিঠা কিনতে আসা এক ক্রেতা আলামিন বলেন, শীতের পিঠার মজা নিতে কাটাখালি মোড়ে আসি। হাসিনা বেগমের পিঠার স্বাদ অসাধারণ, যা শহরের দোকানের চেয়েও ভালো।
পিঠা কিনতে আসা আরেক ক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, শীতের পিঠার মজা নিতে কাটাখালি মোড়ে আসি। হাসিনা বেগমের পিঠার স্বাদ অসাধারণ, যা শহরের দোকানের চেয়েও ভালো।
আরেক ক্রেতা, সুমাইয়া আক্তার বলেন, শীতের সকালে কিংবা রাতে গরম গরম ভাপা পিঠার স্বাদই আলাদা। হাসিনা আপার পিঠায় অন্যরকম মজা পাই। তার মতো সংগ্রামী মানুষ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
আরও পড়ুন
স্থানীয় আল আযহেরা মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মো. আজিমুজ্জামান বলেন, শীত মৌসুমে ভ্রাম্যমাণ পিঠা বিক্রেতারা শুধু খাবার সরবরাহ করেন না, বরং আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে জীবিত রাখেন। হাসিনা বেগমের মতো নারীরা কেবল অর্থ উপার্জনই করছেন না, নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর মাধ্যমে সমাজে শক্তিশালী উদাহরণ তৈরি করছেন। তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রশিক্ষণ এবং স্থানীয় পর্যায়ে স্থায়ী বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন।
শুধু হাসিনা বেগম বা জয়নাল উদ্দিন নয়, বাগেরহাট জেলায় প্রায় তিন শতাধিক নারী-পুরুষ শীতের মৌসুমে রাস্তায় বসে পিঠা বিক্রি করেন। হাসিনা বেগমের মতো অনেকেই এই আয়ে নিজেদের পরিবারকে জীবিকার চাকা সচল রাখছেন।
শেখ আবু তালেব/এনএফ