সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা
সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে শুরু হয়েছে কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি—এই দুই মাস প্রজননের গুরুত্বপূর্ণ সময় হওয়ায় বন বিভাগ কাঁকড়া আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এই নিষেধাজ্ঞা।
প্রজনন সুরক্ষায় উদ্যোগ
বুড়িগোয়ালিনী বনস্টেশন অফিসার (এসও) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, কাঁকড়ার প্রজনন সুরক্ষিত রাখতে এবং পরবর্তী বছরে উৎপাদন বাড়িতে দুই মাস কাঁকড়া ধরার অনুমতি বন্ধ রাখা হয়েছে। এ সময় বনবিভাগ ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, যদি প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া শিকার বন্ধ রাখা যায়, তবে আগামী বছর প্রজনন বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদনও বাড়বে।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. মশিউর রহমান বলেন, কাঁকড়া বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান উপকরণ। প্রজনন মৌসুমে আহরণ বন্ধ রাখার ফলে কাঁকড়ার প্রাকৃতিক উৎপাদন বাড়বে। এ জন্য জেলেদের কাঁকড়া আহরণ বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আহরণ নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
সুন্দরবনের বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা, কৈখালী ও কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের অধীনে ২ হাজার ৯০০টি নৌকার মধ্যে ১ হাজার ৬০০টি কাঁকড়া ধরার জন্য নিবন্ধিত। শ্যামনগর উপজেলায় নিবন্ধিত প্রায় ২৮ হাজার জেলের অর্ধেকের বেশি জীবিকা নির্বাহ করেন কাঁকড়া আহরণ থেকে।
হরিনগর বাজারের কাঁকড়া ব্যবসায়ী রতন মণ্ডল জানান, শ্যামনগর থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকার কাঁকড়া ঢাকায় পাঠানো হয়। তবে প্রজনন মৌসুমে এই রপ্তানি কার্যক্রম শূন্যের কোটায় নেমে আসে, যা সরাসরি কয়েক হাজার মানুষের জীবিকার ওপর প্রভাব ফেলে।
জেলে সমসের গাজী (৭০), সালাম গাজী (৬৫) এবং আবুল ঢালী (৭৫) বলেন, নিষেধাজ্ঞার ফলে দরিদ্র পরিবারগুলো মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে বাধ্য হয়। সরকার থেকে সহায়তা না পেলে এই দুই মাস অনেকের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি হবে।
কাঁকড়ার প্রজননের গুরুত্ব
বন বিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশের মধ্যে ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার জলভাগ। এখানে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি এবং ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এই দুই মাস কাঁকড়ার প্রজননের সময়।
সরকারি উদ্যোগ ও সহযোগিতা দাবি
কাঁকড়া আহরণ বন্ধ রাখার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে চায় সরকার। তবে, স্থানীয় জেলে ও ব্যবসায়ী সমাজ সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য সহায়তার ব্যবস্থা করতে।
স্থানীয়দের মতে, সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রজনন মৌসুমে সম্পদ সংরক্ষণের পাশাপাশি তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।
ইব্রাহিম খলিল/এএমকে