আসামি হয়ে আদালতে সেই পুলিশ কর্মকর্তা
কুষ্টিয়ায় সাবেক পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত বিএনপি কর্মীকে গুলি করে হত্যা মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে কুষ্টিয়া সদর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানার আদালতে হাজিরা দেন তিনি। কড়া নিরাপত্তায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে দুপুর ১টা ১৫ মিনিটের দিকে আদালত থেকে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালতে হাজিরা শেষে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, ‘জেলা থেকে মাদক নির্মূল করেন। ৮০/৯০ হাজার পিস একেকজন রেখে দিছে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ১২টার দিকে এসএম তানভীর আরাফাতকে আদালতে নেওয়া হয়। পরে আদালতের আদেশে তাকে কুষ্টিয়া কারাগারে পাঠানো হয়। সেদিনও আদালতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
৫ বছর আগে বিএনপির কর্মী সুজন মালিথাকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় তৎকালীন পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাতসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। বর্তামানে উপ-কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত। এর আগে তিনি কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার খালিশপুর উপজেলায়। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় তিনি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার ছিলেন। আন্দোলনে সাংবাদিকদের ওপর হামলার অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে।
কুষ্টিয়ায় চাকরিকালে বিতর্কিত ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এসএম তানভীর আরাফাত। কুষ্টিয়া জেলায় আসার পর থেকেই নানা কর্মকাণ্ডে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এমনকি এসব কাণ্ডে তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। ভুগতে হয় বিভাগীয় শাস্তিও।
২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ায় ‘কুমারখালী নাগরিক পরিষদ’র ব্যানারে আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম আলতাফ। সেখানে অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়ার তৎকালীন পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত। তিনি তার বক্তব্যে বিরোধী পক্ষগুলোকে ‘তিনটি অপশন’ দেন । তানভীর আরাফাত বলেন, ‘এক. উল্টাপাল্টা করবা হাত ভেঙে দেব, জেল খাটতে হবে। দুই. একেবারে চুপ করে থাকবেন, দেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবেন না। তিন. আপনার যদি বাংলাদেশ পছন্দ না হয়, তাহলে ইউ আর ওয়েলকাম টু গো ইউর পেয়ারা পাকিস্তান। ’ তার এ বক্তব্য নিয়ে তখন তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হয়।
এছাড়াও তানভীর এক সমাবেশে ‘বালিশ ছাড়া শোওয়াইয়া দেব’ বলেও ঘোষণা দেন, যেটাকে বিচারবহির্ভূত হত্যার হুমকি বলে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়।
এমনকি ভেড়ামারায় পৌর নির্বাচনে ভোট কারচুপিতে বাধা দেওয়ায় কর্তব্যরত একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে লাঞ্ছিত করার অপরাধে উচ্চ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল তানভীর আরাফাতকে। ওই ঘটনায় আগে থেকেই তিনি বিভাগীয় শাস্তি (পদায়ন বঞ্চিত) ভোগ করছিলেন।
রাজু আহমেদ/আরএআর