প্রস্তুতের ৪ বছর পরও বরাদ্দ হয়নি অধিকাংশ প্লট
ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তাদের কাজের সহযোগিতায় প্লট বরাদ্দ দিতে বরগুনায় প্রস্তুত করা হয়েছে বিসিক শিল্পনগরীর প্লট। তবে দাম বেশির অভিযোগে প্লট বরাদ্দ নিতে আগ্রহ নেই অধিকাংশ উদ্যোক্তাদের। ফলে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার ৪ বছর পার হলেও বরাদ্দহীন রয়েছে বিসিকের অধিকাংশ প্লট। তবে দুই দফায় দাম কমানোয় ২৫ সালের মধ্যে বিসিকের সব প্লটের বরাদ্দ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা বরগুনার বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মিলটন চন্দ্র বৈরাগী।
বরগুনায় বিসিক শিল্পনগরী কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের প্লট বরাদ্দ দিতে ২০১১ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে প্রথমে ৭ কোটি ৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে তা আবারও ব্যয় বাড়িয়ে ১১ কোটি ১৬ লাখ টাকায় অনুমোদন হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি ও নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ না হওয়ায় কয়েক দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়। মোট ১৮ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বরগুনার এ বিসিক শিল্পনগরীতে ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয় ৬০টি প্লট।
বিসিক শিল্পনগরীতে উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে ৬০টি প্লটকে এ, বি এবং এস তিনটি ক্যাটাগরিতে প্লট প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রথমে এ সব প্লটে দাম শতাংশ প্রতি ৩ লাখ ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও বর্তমানে দাম কমিয়ে তা শতাংশ প্রতি ২ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপরও এখন পর্যন্ত প্লট প্রস্তুতির চার বছরে মাত্র ২০টি প্লট বরাদ্দ হয়ছে। বর্তমানে বাকি প্লট বরাদ্দের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। উদ্যোক্তাদের দাবি প্লটের দাম বেশিসহ জমি পেতে রয়েছে বিভিন্ন জটিলতা। এতে অনেকেই প্লট নিতে আগ্রহী হয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলেও পরবর্তীতে আবার তা ফেরত নিয়েছেন।
বিসিকের প্লট বরাদ্দ নিতে আগ্রহী হয়েও বরাদ্দ না নিয়ে ফেরত এসেছেন আব্দুর রহিম নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, রেজিস্ট্রেশন করার পর সব কাগজপত্র নিয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকেছিল। পরে সেখানকার প্লটের যে দাম নির্ধারণ করছে সে দামে আমার মতো সাধারণ উদ্যোক্তার নেওয়ার তৌফিক নেই। এছাড়া বাইরের জমির তুলনায় ওই জমির দাম প্রায় তিন থেকে চারগুণ বেশি। আমার কাছে ওই জমি বরাদ্দ নেয়ার টাকা না থাকায় ফেরত আসতে বাধ্য হতে হয়েছে।
আসমা আক্তার সিতু নামে আরেক নরাী উদ্যোক্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিসিক শিল্পনগরীতে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা আছে। আমারা ছোট উদ্যোক্তা, ভবিষ্যতে খারখানা তৈরি বা অন্য ব্যবসায় আগ্রহী হতে পারি। তখন আমাদের ওই প্লট হাতছাড়া হয়ে যাওয়া বা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে বিধায় প্লট নিতে আগ্রহী হয়ে ফরম সংগ্রহ করেও আবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি। বরগুনায় অন্য যে উদ্যোক্তারা আছেন, তারাও হয়তো এ সব কারণে বিসিকের প্লট নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী মো. ফয়সাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিসিক শিল্পনগরীর প্লট বরাদ্দে যে নিয়ম রয়েছে তা একজন তরুণ উদ্যোক্তার পক্ষে পূরণ করে প্লট বরাদ্দ নেয়া কঠিন। তরুণ উদ্যোক্তাদের কথা চিন্তা করে যদি প্লট বরাদ্দ পেতে দাম আরও কমিয়ে একটু সহজ প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা হয় তহলে তরুণ উদ্যোক্তারা প্লট বরাদ্দ নিতে আগ্রহী হবে।
বরগুনার বিসিক শিল্পনগরী কর্মকর্তা মিলটন চন্দ্র বৈরাগী ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্লটের মূল্য একটু বেশি থাকায় শুরুতে উদ্যোক্তাদের আগ্রহ কম ছিল। তবে উদ্যোক্তাদের দাবির প্রেক্ষিতে দুই দফায় প্লটের দাম কমানো হয়েছে। ৬০ টি প্লটের ২০ টি আগেই বরদ্দ হয়েছে, বর্তমানে ২০ টি প্লট বরাদ্দের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বাকি প্লটের জন্যও কিছু কিছু আবেদন জমা হচ্ছে। আশাকরি ২৫ সালের শুরুতে প্লেটগুলো বরাদ্দ হয়ে যাবে এবং একই সালের মধ্যে এখানে কারখানায় বিভিন্ন উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হবে।
বরগুনার বিসিক শিল্পনগরী উপ ব্যবস্থাপক কাজী তোফাজ্জল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে যে প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া সম্পন হয়েছে এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান অনুমতি নিয়ে উৎপাদন শুরু করেছে। নতুন করে ১৭ থেকে ১৮ টি প্লট বরাদ্দ দিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আঞ্চলিক অফিস খুলনায় পাঠিয়েছি, সেখান থেকে ঢাকায় পাঠানোর পর অনুমতি পেলে প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, প্লটের দাম কামনোর পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে কিস্তি পরিশোধে পুরুষদের জন্য ১ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ৬ বছর এবং নারীদের জন্য ৭ বছর করা হয়েছে।
আব্দুল আলীম/আরকে