মানিকগঞ্জে বাড়ছে পেঁয়াজের আবাদ
অনুকূল আবহাওয়া আর বাজারদর ভালো হওয়ায় মানিকগঞ্জে পেঁয়াজ চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। চলতি মৌসুমের জেলার হরিরামপুর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আবাদের পরিমাণ বাড়ায় লোকসানের শঙ্কা মাথায় নিয়ে পেঁয়াজ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এ অঞ্চলে বাড়ছে পেঁয়াজের আবাদ।
জেলার সাতটি উপজেলায় কমবেশি পেঁয়াজের আবাদ করা হয়। এর মধ্যে হরিরামপুর ও শিবালয় উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় পেঁয়াজের। গুটি পেঁয়াজ, সাগা, হালিসহ বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজের আবাদ করেন চাষিরা।
হরিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি বছর উপজেলায় প্রায় ২ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভালো ফলনের পাশাপাশি বাজার দর ভালো থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ পেঁয়াজ চাষ হবে বলে আশা করছে উপজেলা কৃষি অফিস।
আরও পড়ুন
সরেজমিনে দেখা গেছে, হালি পেঁয়াজের চারা রোপণ করতে কৃষক-শ্রমিক, শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সীরা মাঠে চারা রোপণ করছেন। জমিতে ১৫ থেকে ২০ জন মিলে দলবদ্ধভাবে চারা রোপণের কাছে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। জমি প্রস্তুত শেষে হালি চারা রোপণের জন্য একজন ছোট আকারে লাঙল দিয়ে কেল(সারি) কাটছেন। আর বাকি লোকজন ওই কেলে(সারি) হালি পেঁয়াজের চারা রোপণ করছেন।
উপজেলার গোপীনাথপুর চরপাড়া গ্রামের কৃষক সেলিম মিয়া বলেন, গত বছর প্রায় তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলাম। বাজার দর ভালো পাওয়ায় লাভ হয়েছিল। এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে হালি পেঁয়াজ চাষ করবো। ইতোমধ্যে আড়াই বিঘা জমিতে হালি পেঁয়াজের চারা রোপণ করেছি। তবে গত বছরের তুলনায় বিঘা প্রতি এ বছর খরচে বেড়েছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা।
তিনি আরও বলেন, জমিতে হালচাষ, বীজ, চারা রোপণ, পরিচর্যা ও সার-কীটনাশকসহ প্রতি বিঘায় পেঁয়াজ চাষে খরচ হবে ৪৫ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। অনুকূল আবহাওয়া আর উত্তম ফলন হলে বিঘা প্রতি ৫০-৬৫ মণ পেঁয়াজ পাওয়ার আশা করছি।
গোপীনাথপুর ভাটিপাড়া গ্রামের কৃষক লাভলু হোসেন বলেন, দুই বিঘা জমিতে চারা রোপণ করছি। এবার হালি পেঁয়াজের চারা কিনেছি সাড়ে তিন হাজার টাকা করে। ফলন ভালো আর বাজার দর ভালো হলে লাভ হবে আর না হলে চালান (বিনিয়োগ) উঠবে। তবে লোকসানের বিষয়টিও মাথায় রয়েছে। তারপরও প্রতিবছরেই পেঁয়াজ আবাদ করি এ বছরও করেছি। লাভ বা লোকসান সবই রিজিকের বিষয়।
শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর এলাকার কৃষক শাহিন মিয়া বলেন, বিভিন্ন ফসলের আবাদ করলেও পেঁয়াজ চাষ করা বাদ যাচ্ছে না। গতবার পেঁয়াজ খেত থেকে তোলার পর ভাল দাম না পেলেও শেষের দিকে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা মণ বিক্রি করেছি। বেশি লাভ না হলেও লোকসান হয়নি। এ বছর সাত বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি তাতে প্রায় চার লাখ টাকা খরচ হয়েছে। দাম ভালো পেলে লাভবান হবো আশা করছি।
হরিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান বলেন, চলতি মৌসুমে হরিরামপুর উপজেলায় ২ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা আশা করছি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ পেঁয়াজ চাষ করবে কৃষকরা। গত বছর বাজারে পেঁয়াজের চড়া দাম পাওয়ায় পেঁয়াজ চাষে ঝুকছেন উপজেলার অধিকাংশ কৃষক। আশা করছি, উপজেলাসহ জেলার চাহিদা পূরণ করে অন্যান্য অঞ্চলেও চাহিদাও পূরণ করা সম্ভব হবে এ অঞ্চলের পেঁয়াজ দিয়ে। কৃষি অফিস থেকে সবসময় প্রান্তিক কৃষকদের পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সোহেল হোসেন/এআইএস