পরীক্ষার প্রবেশপত্র আনতে বেরিয়ে দুই সন্তান ফিরলেন লাশ হয়ে
শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী মাইসা তাসনিম মিমের (২১) আগামী ২ জানুয়ারি সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা ছিল। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে বড় ভাই কামরুজ্জামান বাবুকে (২৬) নিয়ে প্রবেশপত্র তুলতে কলেজের উদ্দেশে বের হন তিনি। কিন্তু কলেজে আর যাওয়া হয়নি তাদের। পথিমধ্যে বেপরোয়া গতির একটি বাসচাপায় প্রাণ যায় তারাসহ একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ছয় আরোহীর।
নকলা উপজেলার গণপদ্দী ইউনিয়নের কিংকরপাড়া এলাকার কৃষক শাহজাহান আলীর সন্তান নিহত বাবু ও মিম। শেরপুর সরকারি কলেজের মাস্টার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন বাবু।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের বয়রা জোড়াপাম্প এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাদের মধ্যে এক দম্পতিও রয়েছেন। তারা হলেন, সদর উপজেলার আলিনাপাড়া এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে মোখলেছুর রহমান (৬০) ও তার স্ত্রী উম্মে কুলসুম (৩৮)।
নিহত অন্য দুজন হলেন সদর উপজেলার কামারিয়া এলাকার অটোচালক লোকমান হোসেন (৩৮) ও শ্রীবরদী উপজেলার পশ্চিম চিথলিয়া এলাকার সুবাস চন্দ্র বিশ্বাসের স্ত্রী মিনা রানী (৪৫)।
সরেজমিন বাবু ও মিমের বাড়িতে দেখা যায়, সন্তানদের শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন বাবা শাহজাহান আলী ও মা অরুণা বেগম। তাদের মাথায় পানি ঢালছেন স্বজনরা। একটু পরপর জ্ঞান ফিরলেই ছেলে-মেয়ের নাম ধরে বিলাপ করছেন দুজনে। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ
বাবু ও মিমের নানা আবুল কাশেম হাজি বলেন, ‘আমার তিনটা নাতি ছিল। এর মধ্যে দুজনরেই হারায়া ফেললাম। এহন আমার মেয়ে আর জামাই কীভাবে বাঁচব।’
প্রত্যক্ষদর্শী সদর উপজেলার ভাতশালা এলাকার নাজমুল হোসেন জানান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিফাত পরিবহনের বাসটি তাদের নিজ নিজ সাইডে দ্রুতগতিতে যাচ্ছিল। তবে হঠাৎ অটোর সামনে একটি কুকুর চলে এলে সেটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সিএনজি ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। দ্রুতগতির বাসের ধাক্কায় অটোটি দুমড়েমুচড়ে যায় এবং সেটিতে থাকা সবাই নিহত হন।
শেরপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক জাবেদ হোসেন মুহাম্মদ তারেক বলেন, বেপরোয়া গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে লাশগুলো উদ্ধার করে থানায় পাঠিয়েছি।
স্থানীয়রা জানান, বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে দিন দিনই বাড়ছে এমন সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা। এতে নিঃস্ব হচ্ছে বহু পরিবার। তাই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তাদের।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবায়দুল আলম বলেন, বাসটি জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক ও তার সহকারীকে আটক করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ তাদের নানাভাবে সচেতন করা হচ্ছে।
মো. নাইমুর রহমান তালুকদার/এএমকে