‘ইরফান খুনি—তা আমরা বিশ্বাস করি না’
চাঁদপুরের নৌযানে সাত খুনের ঘটনায় আজও চাঁদপুরে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। তাদের দাবি প্রকৃত খুনিদের এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। খুনের প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সামনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শ্রমিকরা বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নারায়ণগঞ্জ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা মো. মজুবুল হক মাস্টার বলেন, নৌপথে আমরা যদি চলার নিরাপত্তা না পাই। তাহলে নৌপথে হয় নৌযান থাকবে, তা না হলে নৌ দস্যু থাকবে। সাত খুনের ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত দুঃখজনক। একটি জাহাজ চালাতে হলে মোট ছয়জন লোক লাগে। অর্থাৎ এর সামনের অংশে দুইজন, ইঞ্জিন চালু করতে দুইজন ও ব্রিজ কন্ট্রোল করতে দুইজন লোক লাগে। আকাশ মন্ডলের (জাহাজের লস্কর আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান) একা একটি জাহাজ চালানো কখনোই সম্ভব না।
চট্টগ্রাম নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, সরকারের বিভিন্ন বাহিনী বলে আকাশ মন্ডল নিজেই সাতজনকে খুন করেছে। এটা কখনোই হতে পারে না। আকাশ মন্ডল ওরফে ইরফান এই হত্যাকাণ্ডের খুনি—তা আমরা বিশ্বাস করি না। যারা খুন হয়েছে তাদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
তিনি বলেন, প্রশাসন সারা দেশে শ্রমিকদের সঙ্গে তামাশা করছে। আমাদের দাবি অবিলম্বে খুনিদের আটক করা হোক। তা না হলে পণ্যবাহী জাহাজের পাশাপাশি যাত্রীবাহী লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের ডাক দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম লাইটার জাহাজ নেতা নাছির মাস্টার বলেন, নদীতে জাহাজ শ্রমিকরা থাকবে, আর না হয় ডাকাত থাকবে। তিনি বলেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে যদি কোনো ফয়সালা না আসে। তাহলে সার্ভিস বন্ধ করে দেব। এতে পুরো দেশ অচল হয়ে যাবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বাগাবাড়ী নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের প্রচার সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. কবুর হোসেনসহ দেশের বিভিন্ন বন্দর এলাকার পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিক ফেডারেশেনের নেতৃবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ ডিসেম্বর দুপুরে চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীতে এমভি আল বাখেরা জাহাজ থেকে পাঁচজনের মরদেহ এবং তিনজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে দুজন মারা যান।
নিহতরা হলেন—নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার এগারনলি এলাকার আবেদ মোল্লার ছেলে সালাউদ্দিন (৪০), একই উপজেলার পাংখারচর উত্তর এলাকার মাহবুবুর রহমান মুন্সির ছেলে আমিনুর মুন্সী (৪১), ফরিদপুরের কোতোয়ালি উপজেলার জুয়াইর এলাকার মৃত আনিছুর রহমানের ছেলে মো. গোলাম কিবরিয়া (৬৫), একই এলাকার মৃত আতাউর রহমানের ছেলে শেখ সবুজ (২৭), মাগুড়ার মহম্মদপুর উপজেলার চর বসন্তপুর এলাকার আনিছ মিয়ার ছেলে মো. মাজেদুর (১৮), একই উপজেলার পলাশবাড়িয়ার দাউদ হোসেনের ছেলে মো. সজীবুল ইসলাম (২৯) এবং মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার দেলোয়ার হোসেন মুন্সির ছেলে রানা কাজী (৩২)। তারা সবাই জাহাজের স্টাফ।
এ ঘটনায় চাঁদপুরে হাইমচর থানায় হত্যা ও ডাকাতির অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন জাহাজটির মালিক মাহবুব মোর্শেদ। পরে র্যাব বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকা থেকে আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানকে গ্রেপ্তার করে। তারপর নৌপুলিশের পরিদর্শক মো. কালাম খা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ফারহান সাদিকের আদালতে হাজির করেন। আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আনোয়ারুল হক/এএমকে