৬ জনের প্রাণ নিয়ে যেভাবে পালিয়ে যান বাসচালক
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় বাসের ধাক্কায় ৬ জন নিহতের ঘটনায় ঢাকার কেরাণীগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়েছে। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার নন্দনকোনা গ্রামের নুরুল আমিন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় চালকসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাঁসাড়া হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদের জিলানি।
এদিকে টোল প্লাজায় থেমে থাকা তিনটি গাড়িকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে ৬ জনকে হত্যার ঘটনায় জড়িত বেপারী পরিবহনের সেই বাসটির ফিটনেস সনদ ছিল না বলে জানা গেছে। বাসটির নম্বর (ঢাক-মেট্টো ব-১৪-৫১৭০)। যিনি বাসটি চালাছিলেন সেই চালকের লাইসেন্সেরও মেয়াদ হারিয়েছিল দুই বছর আগে।
শনিবার বিকেলে ঘাতক বাসচালক মো. নুরুদ্দিনকে (২৭) র্যাব-১০ আটকের পর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে র্যাব-১০। আটক নুরুদ্দিন ভোলার দৌলতখান উপজেলার জয়নগর এলাকার মো. রফিকের ছেলে। নুরুদ্দিন গত ১০ বছর ধরে বাস, ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহন চালানোর কাজ করে আসছিলেন।
বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়, গতকাল শনিবার টোলপ্লাজায় দুর্ঘটনা ঘটনোর পর কৌশলে চালক নুরুদ্দিন ও তার সহকারী পালান। সেখান থেকে নুরুদ্দিন অটোরিকশায় করে প্রথমে আব্দুল্লাহপুর, পরে সেখান থেকে সিএনজিতে করে নারায়ণগঞ্জে তার ফুপাতো বোনের বাড়িতে পালিয়ে যান।
র্যাব জানায়, মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার বিষয়টি গণমাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা হয়। ঘটনাটি সারাদেশে আলোচিত হয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেন তারা। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাসের চালক ও অন্যদের আটক করতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। পরে র্যাব-১০ ও ১১ এর একটি গোয়েন্দা দল নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অভিযান চালায়। সেখান থেকে নুরুদ্দিনকে আটক করা হয়। আটকের পর ঘটনার বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নুরুদ্দিন সে সময় নিজে বাস চালাচ্ছিলেন এবং ঘটনাটি তিনি নিজে ঘটিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।
আটক নুরুদ্দিনের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, বাসটি ৬০ জন যাত্রী নিয়ে সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঢাকার সায়দাবাদ থেকে পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। গন্তব্যস্থলে দ্রুত পৌঁছাতে শুরু থেকেই বেপরোয়াভাবে বাসটি চালানো হচ্ছিল। বেলা ১১টার দিকে ধলেশ্বরী টোলপ্লাজায় আসলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাইভেট কার ও মোটর সাইকেলের ওপর উঠিয়ে দেয় বাসটি।
আরও পড়ুন
র্যাব-১০ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তাপস কর্মকার বলেন, আটক চালক বাস চালানোর সময় মাদকাসক্ত ছিলেন না। তিনি তন্দ্রা আচ্ছন্নও ছিলেন না। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তার বেপরোয়া গতির কারণে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মর্মান্তিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
প্রসঙ্গত, গতকাল শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় টোল পরিশোধের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারকে ধাক্কা দিয়ে দুমড়ে মুচড়ে দেয় ঘাতক বেপারী পরিবহনের বাসটি। এতে প্রাইভেট কারে থাকা একই পরিবারের চারজন ও মোটরসাইকেলের দুই আরোহীর মৃত্যু হয়। আহত হয়েছেন আরও চারজন।
নিহতরা হলেন- মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার নন্দনকোনা গ্রামের প্রয়াত সুমন খানের মেয়ে আমেনা আক্তার (৪০), তার বড় মেয়ে ইসরাত জাহান (২৪), ছোট মেয়ে রিহা মনি (১১), ইসরাত জাহানের ছেলে আইয়াজ হোসেন (২), মোটরসাইকেলের চালক সুমন মিয়ার স্ত্রী রেশমা আক্তার (২৬) ও তার ছেলে মো. আবদুল্লাহ (৭)।
এ ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন প্রাইভেট কারের মালিক সোহান (২৮), তার বোন ফাহমিদা আক্তার (১৭), স্ত্রী আনামিকা আক্তার (২০) ও মোটরসাইকেলের চালক সুমন মিয়া (৪২)।
এ ঘটনায় নিহত আমেনা আক্তারের বড় ভাই নুরুল আমিন বাদী হয়ে চালকসহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
হাঁসাড়া হাইওয়ে থানার ওসি আবদুল কাদের জিলানি বলেন, এ ঘটনায় কেরাণীগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। ঘাতক বাসটি আমাদের থানা হেফাজতে আছে। এ ঘটনায় বাসের চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে কয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তিনি তা বলতে রাজি হননি।
ব.ম শামীম/আরএআর