ইউপি চেয়ারম্যান মুনকে অপসারণের দাবি এলাকাবাসীর
নীলফামারীর ডিমলার গয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শরিফ ইবনে ফয়সাল মুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং চারিত্রিক অসঙ্গতির অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগে ওই চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ২০১৪ সাল থেকে গয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফ ইবনে ফয়সাল মুন স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করতেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি এবং জেল খাটানোর ব্যবস্থা করতেন। জমি-দোকানপাট দখল এবং ইউনিয়ন পরিষদের জমি অবৈধভাবে লিজ দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তিনি। এ ছাড়া উঠতি বয়সী তরুণদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন প্রতারণা ও মাদক ব্যবসার বড় চক্র। তার সহযোগিতায় সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ নীলফামারী ও পার্শ্ববর্তী জেলা লালমনিরহাটে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, তিনি ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনগুলোতে ভোট কারচুপি করে ক্ষমতাসীন দলের অবৈধ সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার ও তার চাচাশ্বশুর মোতাহার হোসেনকে খুশি রেখে অপরাধের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। সম্প্রতি হাটবাজার উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন, যা দিয়ে তিনি নিজ গ্রামের বাড়িতে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। স্থানীয় স্কুলশিক্ষকের স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে তুলতে গিয়ে ওই দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমন দুর্নীতিবাজ, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ও চারিত্রিক অসঙ্গতিপূর্ণ ব্যক্তির কাছ থেকে চারিত্রিক সনদ বা নাগরিক সেবা গ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ করছেন তারা। অভিযোগকারীরা শরিফ ইবনে ফয়সাল মুনকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগকারী শহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্ত্রী ও সন্তান আমার থেকে দূরে রয়েছে, আর এর পেছনে মূল কারণ হলো চেয়ারম্যানের অনৈতিক কর্মকাণ্ড। তার পরকীয়ার কারণে আমার পরিবারে অশান্তি নেমে এসেছে। আমি তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে চাইলেও স্থানীয় পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ, তিনি তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ দোসর। অপরদিকে, তিনি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাকে পুলিশ দিয়ে আটক করিয়েছিলেন। তাছাড়া, সাম্প্রতিক হাট-বাজারের ৩৫ লাখ টাকা তুলে পুরো অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। সেই অর্থ দিয়ে বাজারে কোনো উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ করা হয়নি। আমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছি এবং ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। যেহেতু তিনি আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, তাই তার অপসারণ দাবি করছি। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন নিশ্চিত করার জন্য তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আরেক অভিযোগকারী গোলাম সারোয়ার খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বহু অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে নির্বাচন করেছেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন চাঁদাবাজি, এলাকাবাসীকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য একটি চক্র গড়ে তোলেন। তার এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ কেউ করতে গেলে নানাভাবে হয়রানি করা হতো। তার আত্মীয় মন্ত্রী (চাচাশ্বশুর মোতাহার হোসেন), সেই দাপটে সব লুটেপুটে খেয়েছে। কেউ কোনো কথা বলতে পারেনি। মানুষের সংসার নষ্টের মতো কাজও সে করেছে। এরকম চেয়ারম্যান এলাকাবাসীর কেউই চায় না। আমরা চাই দ্রুত তাকে অপসারণ করা হোক।
এ বিষয়ে গয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফ ইবনে ফয়সাল মুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এলাকায় আমার বিষয়ে খোঁজ নিতে পারেন আমি কেমন, আর যারা অভিযোগ দিয়েছে তারা কেমন মানুষ। গ্রামের মানুষ রাজনীতি বুঝেন না, অভিযোগ দিতেই পারেন। পক্ষে-বিপক্ষে লোক থাকবেই, যেহেতু নির্বাচন করেছি।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাসেল মিয়া অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হবে এবং প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শরিফুল ইসলাম/এমজেইউ