ছাত্র-জনতার তোপের মুখে চেয়ারম্যানকে পুলিশে দিলেন ইউএনও
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে উপজেলা পরিষদের মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় কমিটির সভা থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইউনিয়ন পরিষদের এক চেয়ারম্যানকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশে দেওয়া ওই ব্যক্তি হলেন পাঁচবিবি উপজেলার বালিঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরী ওরফে বিপ্লব। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার বর্তমান দলীয় পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার উপজেলা পরিষদে মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় কমিটির সভা ছিল। উপজেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় কমিটির সদস্য। এদিন বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শুরু হয়। ইউএনও, থানা পুলিশের প্রতিনিধি, কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান, প্যানেল চেয়ারম্যান ও উপজেলার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ১২টার পর আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষ হয়। এরপর মাসিক সমন্বয় কমিটির সভা শুরু হওয়ার পর বালিঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরী সভায় যোগ দেন। সমন্বয় কমিটির সভা চলার সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্থানীয় কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধি ও বিএনপির কিছু নেতাকর্মী এসে সভাকক্ষ ঘেরাও করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শুরু করেন। ছাত্র প্রতিনিধিদের কয়েকজন সভাকক্ষের ভেতরে ঢোকেন। তখন সভাকক্ষে হট্টগোল শুরু হয়। ইউএনও মাহমুদুল হাসান জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতির কথা জানান। এরপর দেড়টার দিকে ইউএনও মাহমুদুল হাসান বালিঘাটা ইউপি চেয়ারম্যানকে সভাকক্ষ থেকে বের করে নিয়ে আসেন। এ সময় ছাত্র প্রতিনিধি ও বিএনপির নেতাকর্মীরা চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরীর দিকে তেড়ে যান। অন্য কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রাণভয়ে সভাকক্ষ থেকে দৌড়ে উপজেলা পরিষদের একটি দপ্তরে ঢুকে পড়ে দরজা আটকে দেন। ইউএনও মাহমুদুল হাসান ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরীকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরীকে পিকআপ ভ্যানে তুলে দ্রুত উপজেলা পরিষদ চত্বর ত্যাগ করে। এ সময় ছাত্র প্রতিনিধি ও বিএনপির কিছু নেতাকর্মী আ.লীগ সমর্থিত অন্য চেয়ারম্যানদের খুঁজতে থাকেন। ইউএনও উপজেলা পরিষদ থেকে যাওয়ার পর ছাত্র প্রতিনিধি ও বিএনপির নেতাকর্মীরা সেখান থেকে চলে যান।
প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলার পরিষদের একটি দপ্তরের কর্মকর্তা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামানকে খুনি ও আওয়ামী লীগের দোসর, তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা পাবেন, এমন কথা বলে একজন ছাত্র প্রতিনিধি চিৎকার করছিলেন। পুলিশের পিকআপ ভ্যান আসার পর ইউএনও স্যার ইউপি চেয়ারম্যানকে সভাকক্ষ থেকে বাইরে এনে পুলিশে দিয়েছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় ছাত্র প্রতিনিধি ও বিএনপির কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
পাঁচবিবির ইউএনও মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভা শেষে সমন্বয় কমিটির সভা চলছিল। ১৮টি দপ্তরের মধ্যে ১৭টি দপ্তরের কথা শেষে আরেকটি দপ্তর নিয়ে কথা শুরুর সময় স্থানীয় ছাত্র প্রতিনিধি, বিএনপির লোকজন সভাকক্ষের বাইরে জড়ো হয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এ সময় হট্টগোল শুরু হয়। জেলা প্রশাসক স্যারকে ঘটনাটি জানিয়ে পুলিশ ডেকে ওই ইউপি চেয়ারম্যানকে সেইফ এক্সিট দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। গত ৫ আগস্টের পর ওই চেয়ারম্যানসহ অন্য চেয়ারম্যানরা মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় কমিটির সভায় যোগ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন ইউএনও।
পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাওসার আলী বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরী বিপ্লবকে উপজেলা পরিষদ থেকে এনে জেলা পুলিশ গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) পাঠানো হয়েছে।
ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরীকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী নজিবুল সরকার বিশাল হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
চম্পক কুমার/এমজেইউ