বীজ বিহীন পেয়ারা চাষ করে সাড়া ফেলেছেন নাটোরের মাফিজুল
মাস্টার্স পাস করে চাকরি না পেয়ে কৃষি খামার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন নাটোরের মাফিজুল ইসলাম। এই লক্ষ্যে সদর উপজেলার সিংগাদহ গ্রামে পারিবারিক সহযোগিতায় ১১ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন কৃষি খামার। সেখানে হরেক রকম ফল আর ফসলের চাষ করেন মাফিজুল। দুই বছর আগে কৃষি গবেষকদের উদ্ভাবন বীজ বিহীন পেয়ারা জাতের সন্ধান পান তিনি।
এরপর রাঙ্গামাটি হটিকালচার সেন্টার থেকে একশ চারা সংগ্রহ করে গড়ে তোলেন বাগান। ৫ কাঠা জমিতে ১০০টি গাছ দিয়ে শুরু করে সফলতা পেয়েছেন মাফিজুল।
জানা গেছে, নাশপাতি, আপেল ও পেয়ারার সংমিশ্রণে তৈরি বারি-৪ জাতের এই পেয়ারা আবাদে খরচও অনেক কম। এছাড়া পেয়ারাটি সম্পূর্ণ বীজ বিহীন হওয়ায় ভোক্তাদের কৌতুহলের কারণে বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে ভালো। কৃষি গবেষকদের সাত বছরের গবেষণায় উদ্ভাবিত বারি-৪ জাতের এই পেয়ারার আবাদ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। জীবনকাল বেশি হওয়ায় এর বাণিজ্যিক সফলতা দেখছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
এদিকে বাগান দেখতে এসে উচ্ছ্বাসিত হচ্ছেন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, বীজ বিহীন এই পেয়ারার গুণগতমান অনেক ভালো। এর চাষ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া গেলে কৃষক ও ভোক্তারা উপকৃত হবে।
বাগান ঘুরতে এসে সজীব হোসেন নামে এক যুবক ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাফিজুলের বাগানে সীডলেস (বীজ বিহীন) পেয়ারা আবাদ হয়েছে। যা দেখতে বিভিন্ন জায়গায় থেকে মানুষ আসে। প্রথমে আমি নিজেই বিশ্বাস করতে পারিনি যে সীডলেস পেয়ারা হয়। বাগানে এসে প্রথম সীডলেস পেয়ারা দেখলাম। এটা অত্যন্ত সুস্বাদু। অন্য যে কোনো জাতের পেয়ারার চেয়ে এর স্বাদ ভালো। একবার খেয়েই তুলনা করা যাবে।
আরও পড়ুন
কৃষি উদ্যোক্তা মাফিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করে কোনো চাকরি পাচ্ছিলাম না। পরে নিজেকে কৃষির সঙ্গে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেই। এরপর পরিবারের সহযোগিতায় পাশের এলাকায় ১১ বিঘা জমি লীজ নিয়ে একটি কৃষি খামার গড়ে তুলি।
সেই খামারেই গত দুই বছর আগে ৫ কাঠা জমিতে শুরুতে ১০০টি বীজ বিহীন পেয়ারার গাছ রাঙ্গামাটি হটিকালচার সেন্টার থেকে এনে রোপণ করি। নাটোর অঞ্চলে এই জাতের পেয়ারা বাণিজ্যিকভাবে আমি প্রথম চাষ করেছি। এই সিজনে এই বাগান থেকে ১ লাখ টাকার পেয়ারা ও ২ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছি। এখনো বেশ কয়েক লাখ টাকার চারা প্রস্তুত করেছি।
মাফিজুল বলেন, বারি-৪ জাতের পেয়ারার স্বাদ ও গুণগতমান ভালো থাকায় বাজারের এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যার কারণে আমি নিজেও বাগানের পরিধি বৃদ্ধি করে এ বছর ৪ বিঘা জমিতে এ জাতের পেয়ারা গাছ রোপণ করেছি।
তিনি আরও বলেন, বীজ বিহীন পেয়ারা চাষ করে সফল হয়েছি শুনে কৃষি বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা বাগান দেখতে আসছেন। অনেকে এসে বাগান করার জন্য পরামর্শ নিচ্ছেন।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, তরুণ উদ্যোক্তা মাফিজুল নতুন জাতের পেয়ারা চাষ করে ভালো ফলাফল পেয়েছেন। বারি-৪ এই জাতের পেয়ারার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটা দেখতে অনেক আকর্ষণীয়, অনেকটা নাশপাতির মতো। বীজ বিহীন হওয়ায় সব বয়সের মানুষেরা এটা খেতে পারেন। এ ফলের চাহিদাও রয়েছে। আমরা কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক তার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। সেই সঙ্গে নতুন নতুন ফল- ফসল চাষ করতে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করছি।
গোলাম রাব্বানী/আরকে