ময়মনসিংহে ৮ প্রকল্পে অর্থ লোপাট, এতিমখানার টাকাও আত্মসাৎ
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় এডিপির ৮ প্রকল্পের ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকৌশলী, প্রকল্প সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে দুদক। অর্থ লোপাটের ঘটনায় এতিমখানা ও স্কুলের টাকাও আত্মসাৎ করা হয়েছে।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করেছেন জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা। এসময় জেলা দুদকের সহকারী পরিচালক (এডি) বুলু মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
৮ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে— ইছাইল উচ্চ বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য ১০ লাখ টাকা, আন্ধারিয়াপাড়া বিডিএস দাখিল মাদ্রাসা সংস্কারে ১০ লাখ টাকা, কাচিচূড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ লাখ টাকা, সলেমন নেছা এতিমখানা ও দাখিল মাদ্রাসায় ১০ লাখ টাকা, অন্নেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ লাখ টাকা, উপজেলা পরিষদের রাস্তা (এইচবি) করতে ১০ লাখ টাকা, উপজেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ১০ লাখ টাকা, উপজেলা চেয়ারম্যানের কোয়ার্টার মেরামত বাবদ ৫ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন
সূত্র জানায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ফুলবাড়িয়া উপজেলায় ৮টি প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ছিল ৭৫ লাখ টাকা। ৮টি প্রকল্প দরপত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও কাগজে কলমে প্রকল্প দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। কোনো প্রকল্পের কাজই হয়নি কিন্তু সবকটি প্রকল্পের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ দিয়ে কাজ না করেই টাকা উত্তোলন করে ভাগ-বাটোয়ারা করেছেন উপজেলা প্রকৌশলী, প্রকল্প সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রসাদ এন্টারপ্রাইজ, অর্ণব এন্টারপ্রাইজ, উড়ালাল এন্টারপ্রাইজ। গত ২৫ জুন টাকা উত্তোলন করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
দুদক এডি বুলু মিয়া বলেন, উপজেলায় ৮টি প্রকল্পে জন্য ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশনের অনুমোদন পেয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। অভিযোগের ভিত্তিতে ৬ প্রকল্প সরেজমিনে যাচাই বাছাই করেছি। যাচাই করে অভিযোগে সত্যতা পেয়েছি।
দুদকের সহকারী পরিচালক বলেন, কোনো কোনো জায়গায় কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় কাজ চলমান দেখিয়ে টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির কাজ এখনও চলমান অথচ বিল অনেক আগে তুলে নিয়েছে। পরিদর্শনের সময় প্রকল্পের সভাপতিকে (ইউএনও) পাওয়া যায়নি। কারণ তিনি সম্প্রতি বদলি হয়েছেন।
ইচাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. নজিবা আক্তার বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানতাম না, গত ৮ ডিসেম্বর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একজন আমাকে জানায়- আপনাদের জন্য সরকার থেকে কিছু বরাদ্দ আছে। এতে চেয়ার, টেবিল, একটি ল্যাপটপ রয়েছে। আমার প্রশ্ন- আমাকে কিছু না বলে আমার নামে ১০ লাখ টাকার প্রকল্পের টাকা উঠিয়ে ফেলেছেন কীভাবে? আমাকে কাজ বুঝিয়ে দিলেন না কেন? কাজের বিলে স্বাক্ষর নিলেন না কেন। তাহলে কীভাবে হলো? অবশ্যই আমার সই স্বাক্ষর জাল করে এসব করেছেন।
সলেমন নেছা এতিমখানা ও দাখিল মাদ্রাসা জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। সেখানেও কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি। অথচ উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ১০ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
কলেজ শিক্ষক নাজমুল হক বলেন, যাদের মন-মানসিকতা নোংরা তারাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এতিমদের টাকা আত্মসাৎ করতে পারেন।
উড়ালাল এন্টারপ্রাইজের মালিক সজিবের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও সেটি বন্ধ দেখায়।
প্রসাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক বিশ্বজিৎ বলেন, ৮টি প্রকল্পের মাঝে ৩টি প্রকল্পের কাজ হয়েছে। বাকি প্রকল্পের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, কোনো কাজ হয়নি ঠিক, তবে টাকা আত্মসাতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সব টাকা পে-অর্ডার করে রেখেছি। টাকা ফেরত দিয়ে দেব। ৭৫ লাখ টাকার মাঝে ২৫ লাখ টাকার হিসাব ইউএনও জানেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বদলিকৃত) কাবেরি জালাল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আমান উল্লাহ আকন্দ/এমএসএ