গণহত্যাকারী আ.লীগকে নির্বাচনে আসতে দেওয়া হবে না : আখতার
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, আইনের দিক থেকে আওয়ামী লীগের ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা না থাকলেও ছাত্র-জনতা, দেশের আপামর মানুষ ফ্যাসিবাদী, গণহত্যাকারী, মানবতাবিরোধী অপরাধকারী আওয়ামী লীগকে কোনোভাবেই রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করতে এবং নির্বাচনে আসতে দেওয়া হবে না। সেজন্য আবারও আমরা রক্ত দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুরে সফরে এসে নগরীর সাতমাথা এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত রংপুরের কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার আট শহীদের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করতে তিনি রংপুর এসেছেন। এ সময় রংপুরের সংগঠক আলমগীর নয়ন, আরিফুলসহ জাতীয় নাগরিক কমিটির জেলা, মহানগর ও বিভাগীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়া সঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষের উপরে গণহত্যা চালিয়ে যে ভয়ংকর পাপ আওয়ামী লীগ দল হিসেবে করেছে, সে পাপ থেকে মুক্তির জন্য এখন পর্যন্ত কোনো উপায় তারা অবলম্বন করেনি। আওয়ামী লীগের বিচার এখন পর্যন্ত হয়নি, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এখনো আমাদের সহযোদ্ধাদের খুনের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় খুনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাদেরকে কোনোভাবেই বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব বলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর লুটেরা এবং বুর্জোয়া হওয়ার যে মানসিকতা সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। জাতীয় স্বার্থে জাতীয় বুর্জোয়া হতে হবে। দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে, কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করতে হবে। দেশের মানুষের সুবিধাগুলো দেখতে হবে এবং একই সঙ্গে যে অর্থ পাচার হয়, পাচারের মতো কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশ পেয়েছি সেখানে এখানো অনেক ফ্যাসিবাদী নীতি, অনেক পুরোনো নীতি, কানুন ব্যবস্থা রয়ে গেছে। আমরা চাইবো আমাদের যে সংগ্রাম ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত; তার জন্য জাতীয় নাগরিক কমিটির যে সংগ্রাম চলছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে সংগ্রাম চলছে, সারাদেশের মানুষের যে সংগ্রাম চলছে, এই সংগ্রামের ভেতর দিয়ে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের প্রান্তে আমরা পৌঁছাতে পারব।
আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে যখন অভ্যুত্থান হয়। তখন ছাত্র-তরুণরা বাংলাদেশের রাজপথ এমনভাবে দখলে নিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তির জন্য তারা তাদের জীবন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। ৫ আগস্টের সময়কালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মেরুকরণ আমরা দেখেছি। আমরা সেখানে নতুন এক রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক শক্তির উল্লম্ফন হবে। সেটাই আমরা সেদিনই দেখেছি। এই দীর্ঘ ৩-৪ মাসের পথ-পরিক্রমায় বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনতার সঙ্গে আমাদের যে যোগাযোগ হয়েছে এবং বিভিন্ন যে জরিপগুলো আছে তাতে এটা অত্যন্ত সুন্দরভাবে দৃষ্টিগোচর হয়েছে যে দেশের মানুষ চায় নতুন এক রাজনৈতিক শক্তি, যে শক্তির নেতৃত্বে থাকবে তরুণরা। এমন একটি রাজনৈতিক শক্তির, রাজনৈতিক দল প্রত্যাশা করে জনগণ। আমরা ছাত্র-তরুণরা মিলে যে রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠা করার কথা বলছি। আমরা মনে করি নাগরিক কমিটি যে ভাষার উৎপাদন করেছে সেই ভাষায় এই দলটি গঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশে বিবাদমান যত পক্ষ আছে, আদর্শিক পক্ষগুলো আছে, সেই আদর্শিক পক্ষগুলোর সাথে দলাদলিতে লিপ্ত হতে চাই না। বাংলাদেশের জন্য সার্বিকভাবে আমরা একটি মধ্যমপন্থি রাজনৈতিক চর্চা করতে চাই। যে রাজনীতির ভিত্তি হবে বাংলাদেশের স্বার্থ। এই স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেওয়ার কেউ চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলাই হবে আমাদের কর্তব্য। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করাই হবে আমাদের জীবনের শপথ।
আখতার হোসেন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশে নতুন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রংপুরের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলেও নানা বয়সী মানুষ আমাদের সঙ্গে একত্রিত হয়েছে। তারা চায় নতুন একটি রাজনৈতিক শক্তির আবির্ভাব হোক। আমরা বিশ্বাস করি সে রাজনৈতিক শক্তি সামনের দিনে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করবে। মেহনতি মানুষের মুক্তির দিশারী হয়ে উঠবে।
নাম চূড়ান্ত হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ডাকসুর সাবেক এই নেতা বলেন, এরই মধ্যে আমরা অনেকগুলো নাম পেয়েছি। সেখান থেকে ছাত্র-জনতা এবং বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে এ ধরনের একটা নাম আমরা সিলেক্ট করব।
বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এখনো উন্নয়ন হয়নি। এখনো পুলিশ কাজ করছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব জায়গায় এখনো আওয়ামী দোসর রয়েছে। অনেক জায়গায় মামলার ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এবং সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে, মামলা বাণিজ্য হচ্ছে। সরকার এসব ঠেকাতে ব্যর্থ। আমাদের দাবি বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি মাঠে কাজ না করতে চায় তাহলে তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে জুলাই বিপ্লবে আন্দোলনকারী তরুণদের নিয়োগ দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে হবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। সয়াবিন তেল মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে না। যা সাধারণ মানুষের জন্য অনেক কষ্টের বিষয়। আমরা চাই দেশের মানুষের কথা বিবেচনা করে সরকার ব্যবসায়ীদের পর্যাপ্ত পরিমাণ এলসি দিক। যাতে করে দেশের মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য কষ্ট করতে না হয়। আমরা আশা করব যে সিন্ডিকেটগুলো আছে এবং যারা এগুলো করছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোরতম ব্যবস্থা নেবে। এ সময় ব্যবসায়ীদের ব্যক্তি স্বার্থে বুর্জোয়া না হয়ে জাতীয় স্বার্থে বুর্জোয়া হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
পরে আখতার হোসেন কাউনিয়া উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নের ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আব্দুল লতিফের কবর জিয়ারত ও শহীদ পরিবারের খোঁজখবর নেন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর