চিকিৎসক সংকটে খায়েরহাট হাসপাতালটি বন্ধ হওয়ার পথে
ভোলার খায়েরহাট ৩০ শয্যা হাসপাতালটিতে ডাক্তার সংকটে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা।
ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী, দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়গনগর, উত্তর জয়নগর, বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা ও গঙ্গাপুর ইউনিয়নসহ আশেপাশের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসাসেবার ভরসাস্থল খায়েরহাট ৩০ শয্যা হাসপাতাল। বর্তমানে চিকিৎসক ও নার্স সংকটে বন্ধ হওয়ার মুখে হাসপাতালটি।
এর আগে হাসপাতালটি পুরোদমে চালুর দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
জানা গেছে, খায়েরহাটের ১০ শয্যা এ হাসপাতালটিকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর ৩০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ৩০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পর থেকে পুরোদমে হাসপাতালটির আধুনিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ পেয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। গত কয়েক বছর ধরে হাসপাতালটি ভালোভাবে সেবা দিলেও গত ২ বছর ধরে ধীরে ধীরে হাসপাতালের জনবল সংকট দেখা দেয়। সম্প্রতি এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে চিকিৎসক শূন্য হয়ে পড়েছে হাসপাতালটি।
হাসপাতালটিতে ৯ জন চিকিৎসকের পদের বিপরীতে মাত্র একজন ডেন্টাল চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন এবং তিনি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বর্তমানে ২০ শয্যার হাসপাতালটিতে বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক।
এছাড়া সিনিয়র স্টাফ নার্সদের ১৩টি পদের মধ্যেও ১০টি পদ শূন্য। যার কারণে চিকিৎসক ও নার্স সংকটে পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়েছে জরুরী বিভাগ,আন্তঃবিভাগসহ সব প্রকার চিকিৎসা কার্যক্রম। গত ১ মাসে হাসপাতালে একজন রোগীও ভর্তি করতে পারেনি হাসপাতাল কতৃপক্ষ। যা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ ফুসছে সেখানকার মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সুমন শিকদার (২৮) ঢাকা পোস্টকে বলেন, চিকিৎসক ও নার্স সংকটের কারণে খায়েরহাট ৩০ শয্যা হাসপাতালে গত ১৯ নভেম্বরের পর থেকে আন্তঃবিভাগে একজন রোগীও ভর্তি করাতে পারেনি। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ সমাজের নিন্মশ্রেণির,সরকারি এ হাসপাতালটি তাদের শেষ ভরসা। এখানকার কোনো মানুষ অসুস্থ হলে তাদেরকে এখন ভোলা সদর হাসপাতাল অথবা বরিশালে নিতে হয়, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
নবজাতক সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন সাদিয়া আক্তার। তিনি বলেন, হাসপাতালে আসার পর জানতে পারলাম হাসপাতালে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। একজন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পেলে ভালো হত। আমার মেয়েকে দেখিয়ে নিতে পারতাম।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হেলপিং হেন্ড সোশ্যাল ফোরামের সভাপতি রাইসুল আলম বলেন, আমাদের হাসপাতালে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয় না। ডাক্তারে আন্দাজের ওপর ওষুধ দেন। যার ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগ ভালো হয় না। আমরা চাই, খায়েরহাট ৩০ শয্যা হাসপাতালে প্রয়োজনীয় জনবল সংকট দূর করে হাসপাতালটি আমাদের চিকিৎসাসেবায় পুরোদমে চালু করা হোক।
খায়েরহাট ২০ শয্যা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরেফিন রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রয়োজনীয় জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। তারপরও যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। জনবল সংকট কেটে গেলে আন্তঃবিভাগও চালু হবে।
খাইরুল ইসলাম/আরকে