নীতিমালা উপেক্ষা করে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে রাবি স্কুল
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সারাদেশে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এই সিদ্ধান্ত তোয়াক্কা না করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করেছে। আর এই পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীদের গুনতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। এমন সিদ্ধান্তে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে বিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
গত ২৮ অক্টোবরের মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল স্বাক্ষরিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশের সব সরকারি (সরকারিকরণসহ) ও বেসরকারি (মহানগরী ও জেলার সদর উপজেলা পর্যায়ের) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি প্রক্রিয়া ডিজিটাল লটারি পদ্ধতিতে সম্পন্ন হবে। শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ নীতিমালা অনুসারে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে হবে।
তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণির ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে নিম্নলিখিত সময়সূচি ও ভর্তি পরীক্ষা অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। ভর্তি ফি ৫০০ টাকা (অফেরতযোগ্য) জমা দিয়ে রশিদের মূল কপি ভর্তি ফরমের সঙ্গে জমা দিতে হবে। ভর্তি পরীক্ষা ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের হবে, যেখানে বাংলা ৪০, ইংরেজি ৩০, এবং গণিত ৩০ নম্বরে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে। উত্তীর্ণ হতে ন্যূনতম ৪০ নম্বর পেতে হবে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, যেখানে অনেক সময়ই নিয়ম বাদে নিজস্ব নিয়মে কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে এবারের ভর্তি প্রক্রিয়া আর প্রশ্নও সহজ, যা শিক্ষার্থীরা সহজেই পার হতে পারে।
স্কুল সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে ১১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার ৫০০ টাকায় ফরম পূরণ করে ৩০২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ফলাফল প্রকাশিত হবে রোববার (২২ ডিসেম্বর)।
এদিকে এ ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা চলছে। ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ ফেসবুক গ্রুপে জুবায়ের আরিফ নামে একজন লিখেছেন, নিয়ম না মেনে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে দেড় লক্ষাধিক টাকা আয় করা হচ্ছে। যেখানে লটারির মাধ্যমে বাছাই করার কথা ছিল। প্রশাসনের জবাবদিহিতা দাবি করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, দেশের অন্যান্য স্কুলে লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া হয়, অথচ এখানে ৫০০ টাকা ফি দিয়ে ফরম পূরণ করে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হচ্ছে, যা নিয়মবহির্ভূত।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের অধ্যক্ষ ড. মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আগামীকাল ভর্তি পরীক্ষায় ৩০২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। আসলে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলগুলো অনেকাংশেই নিজস্ব নিয়মে পরিচালিত হয়। স্কুলের পরিচালক এবং কর্তৃপক্ষ যেভাবে ভালো মনে করেন, সেই নিয়মেই পরিচালিত হয় ভর্তি প্রক্রিয়া।”
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও স্কুলের পরিচালক ড. আক্তার বানু বলেন, “বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি স্কুলের নিয়মাবলির কথা বলা হয়েছে। তবে আধা-সরকারি বা বেসরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। আমাদের ভর্তি প্রক্রিয়াও তুলনামূলক সহজ, যা বাচ্চারা খুব সহজেই অতিক্রম করতে পারবে।”
জুবায়ের জিসান/আরকে