বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কেটে ইটভাটার মাটি পরিবহনে কালভার্ট নির্মাণ
বরগুনায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের বেড়িবাঁধ কেটে কালভার্ট নির্মাণ করে ইটভাটার মাটি পরিবহন করছে এসবিসি নামে একটি ইটভাটা কর্তৃপক্ষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ বাঁধটি কেটে স্থায়ী পথ তৈরি করায় দুর্যোগের সময় নদীর পানিতে প্লাবিত হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের ফসলি জমিসহ বসতঘর। এতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতিসহ ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। এ পথ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।
খোঁজ নিয়ে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার কুমড়াখালী নামক এলাকায় গোলাম মোস্তফা নামে এক ব্যক্তি এসবিসি নামের ওই ইটভাটাটি স্থাপন করেন। প্রায় এক দশক আগে নির্মিত এ ভাটার মালমাল পরিবহনের সুবিধার্থে খাকদোন নদী সংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণের বেড়িবাঁধ কেটে একটি কালভার্ট নির্মাণ করে সুরঙ্গ পথ তৈরি করা হয়। দুই বছর আগে মালিক গোলাম মোস্তফার থেকে ইটভাটাটি কিনে নেন বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তবে মালিকানা পরিবর্তন হলেও বন্ধ করা হয়নি ভাটার মালামাল পরিবহনে নির্মিত ওই কালভার্টি। নদীর চড়ে নির্মিত ইট ও নদী পথে নৌযানে ইটসহ বিভিন্ন মালামাল পরিবহনে এখনও সহজ পথ হসিবে কালভার্টটিই ব্যবহার করা হয়। এতে স্বাভাবিক জোয়ারের থেকে নদীর পানি বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কায় থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
কুমড়াখালী এলাকার বাসিন্দা মো. গফুর মধৃা ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদীর পাড়ে যে ইট তৈরি করা হয় তা রাস্তার অপরদিকে ভাটায় পোড়াতে দ্রুত নেওয়ার জন্য কালভার্টের পথটি ব্যবহার করা হয়। রাস্তা উঁচু হওয়ায় সহজে ওই পথ থেকে মালামাল পরিবহন করা হয়।
বেলাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, কালভার্টটি তৈরি করা হয়েছে শুধু একপাশ থেকে আরেক পাশে ইট আনা নেওয়ার জন্য। যখন কোনো বন্যা হয় তখন প্রথমেই এ কালভার্ট থেকে আমাদের গ্রামে পানি প্রবেশ করে। নদীতে অন্য যেসব কালভার্ট আছে তা আটকানোর ব্যবস্থা আছে কিন্তু এটার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে বন্যা হলে এখান থেকই প্রথমে বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে।
একই এলাকার বাসিন্দা মোসা. তুলি বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাস্তা দিয়ে মালামাল পরিবহন করতে সমস্যা হওয়ায় সহজ পথ হিসেবে কালভার্টটি তৈরি করা হয়েছে। রাস্তা দিয়ে মালামাল পরিবহনের সময় পথচারী এবং বিভিন্ন গাড়ি চলাচলে সমস্যা হবে ভেবেই হয়তো ব্যক্তিগতভাবে এ পথটি তৈরি করা হয়েছে।
বরগুনা জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মুরাদুজ্জামান টিপন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইটভাটার আগের মালিক ব্যাংক ঋণে জড়িয়ে দেউলিয়া হয়ে পড়লে ওই ইটভাটার কিছু জমির দলিল নেন সিদ্দিক। তিনি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর বোন জামাই হওয়ায় ক্ষমতার প্রভাবে ইটভাটার এক একর জমির দলিল নিয়ে পাঁচ একর জমি দখল করে নিয়েছেন। মোস্তফা নামে আগের ওই মালিককে শহরে পর্যন্ত থাকতে দেননি। বর্তমানে তার অধীনে ওই কালভার্ট দিয়ে একপাশের মালামাল অপর পাশে আনা-নেওয়ার কাজ করা হয়। ঘূর্ণিঝড় রেমালে ওই কালভার্ট থেকে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিদ্দিক বর্তমানে আত্মগোপনে আছে।
ইটভাটার মালামাল পরিবহনে কালভার্টটির বিষয়ে জানতে চাইলে এসবিসি ইটভাটার বর্তমানে দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার মো. রিপন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইটভাটাটি দুই বছর হয় আমরা কিনেছি। এর আগে থেকেই প্রায় ৮-১০ ধরে এ কালভার্টটি মালামাল পরিবহন করতে ব্যবহার করা হত। তবে আমরা এখন পর্যন্ত কারো থেকে কোনো মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ পাইনি। এ কারণেই আগেও যেহেতু ব্যবহার করা হয়েছে তাই এখনও আমরা ব্যবহার করছি। তবে বর্ষার মৌসুমে মাটি দিয়ে কালভার্টটি বন্ধ করে রাখা হয় এবং সরকারি কোনো নির্দেশনা পেলে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কালভার্টটি যারা করেছেন তাদের সেটি ভেঙে ফেলে বাঁধটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য নোটিশ দিয়েছি। যাদি তারা নোটিশে দেওয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কালভার্টটি না ভাঙে, তাহলে আমারা নিজেরাই কালভার্টটি ভেঙে বাঁধটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আব্দুল আলীম/আরকে