সাড়ে তিন লাখ মানুষের সেবা দেন ২ জন চিকিৎসক
নীলফামারীর জলঢাকার প্রায় সাড়ে তিন লাখ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবার একমাত্র নির্ভরযোগ্য স্থান হলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তবে কয়েক লাখ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে এখানে ডাক্তার রয়েছেন মাত্র দুইজন। এতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
১২ বছর আগে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও সে তুলনায় নেই কোনো সুযোগ-সুবিধা। এদিকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট থাকায় পরিষ্কার-পরিছন্নতা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে রোগীর স্বজন ও স্থানীয়দের।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সেবা নিতে আসছেন রোগীরা। হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কারণে পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা। হাসপাতালে আসার পরে জরুরি বিভাগে একজন চিকিৎসকের কাছে সেবা নিয়ে ওয়ার্ডে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্স সংকটের কারণে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে নিতে হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। অনেক সময় জরুরি রোগীকে চিকিৎসক সংকটের কারণে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১১ সালে ৩৫ শয্যা থেকে হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে ৫০ শয্যা হলেও এখানে চালু হয়নি বাকি ১৫টি বেড। ভবন থাকলেও জনবল সংকট ও বরাদ্দ না পাওয়ায় অব্যবহৃত পড়ে আছে সেটি। ৫০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে সেখানে ৩৩ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ২ জন ও হাসপাতালে ১০ জন কনসালটেন্টের পদে আছেন মাত্র ২ জন। এছাড়া ৬০ শতাংশ শূন্য রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদ।
চিকিৎসা নিতে আসা রাবেয়া বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছি এখানে এসে দেখি চিকিৎসক নাই। একজন চিকিৎসক জরুরি বিভাগে ছিলেন। আমি আসা মাত্র তিনি খেতে গেলেন। এখন কোলের শিশুকে নিয়ে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। আমার ছেলে অসুস্থ। অপেক্ষা করছি চিকিৎসক এলে চিকিৎসা সেবা নেব।
মহিলা ওয়ার্ডের আরেক আরেক রোগীর স্বজন মমিনা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মেয়ের ডায়রিয়া হয়েছে। গত পরশু দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখানে ঠিকমতো ডাক্তার আসছে না। সকালে একজন ডাক্তার এসে দেখে যায় তারপর সারাদিন আর কেউ আসে না। একজন নার্স আছে তিনি মাঝেমধ্যে এসে দেখে যায়। আমাদের যখন জরুরি প্রয়োজন হয় তখন ডাক্তার নার্স আসে না। জরুরি সময়ে তাদের ডেকেও পাওয়া যায় না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স মৌসুমি বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট এছাড়া কনসালটেন্ট সংকট রয়েছে। আমরা চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। সারাদিন হাসপাতালে ভীড় লেগেই থাকে। আমরা অনেক সময় বাইরেও গিয়েও কাজ করি। দ্রুত জনবল নিয়োগ দিয়ে শূন্যপদ পূরণ হলে সাধারণ মানুষ ভালোভাবে সেবা পাবেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু হাসান মো. রেজওয়ানুল কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালে মাত্র দুজন চিকিৎসক। দুইজন চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীরাও সময়মতো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। এ হাসপাতালে উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ চিকিৎসা নেয়। শূন্যপদে জনবল চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমাদের চাহিদার কথা জানানো হয়েছে। জনবল পূরণ হলে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবার পরিধি বাড়বে।
শরিফুল ইসলাম/আরকে