১৪৪ ধারা জারি, স্থান পরিবর্তন করে বিএনপির সমাবেশ
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলা প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারার কারণে স্থান পরিবর্তন করে অস্থায়ী মঞ্চে সমাবেশ করেছে উপজেলা বিএনপি। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার সাইনবোর্ড বাজার জামে মসজিদের সামনের সড়কে একটি ট্রাকের ওপর মঞ্চ বানিয়ে সমাবেশ করেন নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান। কচুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজরা আছাদুল ইসলাম পান্নার সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ্যাড. অহিদুজ্জামান দিপু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিম, সাবেক সভাপতি এমএ সালাম, সাবেক সহসভপাতি মনিরুল ইসলাম খান, যুগ্ম আহ্বায়ক খাদেম নিয়ামুল নাসির আলাপ, বিএনপি নেতা সরদার জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ও সাবেক সংসদ সদস্য এমএইচ সেলিমের সমালোচনা করেন বিএনপির নেতারা। সমাবেশে কচুয়া উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশ-সংবর্ধনা ঘিরে ১৪৪ ধারা
মঙ্গলবার দুপুরে কচুয়া উপজেলার গোয়ালমাঠ এলাকার মাজেদা বেগম কৃষি প্রযুক্তি কলেজ মাঠে কলেজেটির প্রতিষ্ঠাতা ও বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিমকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী গোয়ালমাঠ রশিক লাল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে একই সময়ে কচুয়া উপজেলা বিএনপি কর্তৃক জনসভার ঘোষণা দেন।
এ নিয়ে উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সহিংসতা এড়াতে সোমবার রাতে ১৪৪ ধারা জারি করেন কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম আবু নওশাদ। ১৪৪ ধারা বাস্তবায়ন করতে সকাল থেকে দুটি সমাবেশস্থলে পুলিশ মোতায়েন ছিল। মঙ্গলবার সকালে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার চেয়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
তবে ১৪৪ ধারা জারির পরেও উপজেলা বিএনপি ও জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশ করার কথা বলে আসছিলেন। কলেজ মাঠ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মঞ্চও প্রস্তুত ছিল। কলেজ মাঠে কোনো নেতাকর্মী জড়ো না হলেও দুপুর থেকে বিদ্যালয় মাঠে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। বিকেল ৩টা নাগাদ কয়েক হাজার নেতাকর্মী মাঠে উপস্থিত হন। জেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ শীর্ষ নেতারা মঞ্চে অবস্থান করেন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা নিজেদেরকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দাবি করে মাইকে ঘোষণা দিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে যায়। এক কিলোমিটার দূরে সাইনবোর্ড বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে অস্থায়ী মঞ্চে সমাবেশ করেন।
উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন
এদিকে দুই পক্ষের সমাবেশ ও ১৪৪ ধারায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জেলা বিএনপি ও সাবেক সংসদ সদস্য এমএ এইচ সেলিম বাগেরহাট প্রেসক্লাবে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
এদিন দুপুর পৌনে ১টার দিকে প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারির সমালোচনা করে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে করেন জেলা বিএনপি। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক টি এম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, সকালে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে সাধ্য অনুযায়ী যুক্তি দিয়ে বুঝাতে চেয়েছি, যে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হবে। সেখানে ১৪৪ ধারা জারির জন্য যে কথা বলা হয়েছে তার কোনো ভিত্তি আমরা খুঁজে পাইনি। আমাদের জনসভার মধ্যমণি ছিলেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সাঙ্গে একই মামলায় মিথ্যা অভিযোগে দীর্ঘ সাত বছর কারাগাভোগ করা বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম খান।
তিনি আরও বলেন, এম এ এইচ সেলিম এমপি হতে দলে এসেছিলেন এবং তা হওয়ার পরে ২০০৯ সালে তিনি দল ছেড়ে চলে যান। এমন যারা সময় সময় আসেন তারা দলে স্থান পাবেন না। সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা বিএনপির সংবাদ সম্মেলনের পরপরই একই স্থানে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি এম এ এইচ সেলিম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, যেহেতু প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে তাই আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমার কলেজ কর্তৃপক্ষকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান স্থগিত করতে বলেছি। ওই অনুষ্ঠান আপাতত হচ্ছে না।
এ সময় তিনি বিএনপিতে ছিলেন এবং বিএনপিতে আছেন উল্লেখ করে বলেন, পরিস্থিতির কারণে কেবল দলের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলাম। তা না হলে হয়তো আমাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হতো। আমি বিএনপির সদস্য পদ থেকে তো পদত্যাগ করিনি। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম বলেন, দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে, সিপাহি জনতার ঐক্যবদ্ধ চেতনার মতো আমাদের ইস্পাত কঠিন ঐক্য ধরে রেখে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও অখণ্ডতা রক্ষা করতে হবে।
বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এমএ এইচ সেলিমের বাগেরহাটে আগমন ও আবারও সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচণের ঘোষণায় বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ থাকায় পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘোষণা হয়েছিল বলে মনে করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
আবু তালেব/এএমকে