নেতাকর্মীদের সাবধান করলেন রুমিন ফারহানা
বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, মামলা বাণিজ্যের সঙ্গে দলের যারা জড়িত রয়েছেন তাদেরকে সাবধান করছি। বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু জীবন দিতে শিখেছে, ক্ষমতার বিরুদ্ধে শক্তভাবে দাঁড়াতে শিখেছে। সাঁতার যে শিখে সে আমৃত্যু সাঁতার কাটতে পারে। সুতরাং সাবধান হয়ে যান।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দেক ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্য ও অপতৎপরতার অভিযোগ প্রসঙ্গে রুমিন ফারহানা বলেন, এই সমস্ত বিষয়গুলো আমাকে খুব আঘাত দিয়েছে। বহু নিরীহ মানুষ টাকা দিলে মামলা থেকে নম্বর যাবে, টাকা না দিলে মামলায় নাম থাকবে এ রকম ঘটনা সারা বাংলাদেশেই ঘটেছে। বিষয়টি এমন যে পূর্বে পারিবারিক, জমি সংক্রান্ত, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক তাই পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করব মামলা নেওয়ার আগে যাচাই-বাছাই করে নথিভুক্ত করবেন। তাছাড়া যেসব মামলা হয়ে গেছে সে মামলার আসামির বিরুদ্ধে পূর্ণ তদন্তের পর গ্রেপ্তারের আওতায় আনবেন।
তিনি আরও বলেন, নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলীয় প্রধান বলেছেন বিএনপি এখনো ক্ষমতায় আসেনি। সেহেতু আমাদের আচার-আচরণের মাধ্যমে নির্ভর করে জনগণ আমাদেরকে ভোট দেবে কিনা। নেতাকর্মীদের এই সমস্ত আচরণ ও অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য অনেককেই বহিষ্কার করা হয়েছে। তারপরও যদি কেউ অনিয়ম, দুর্নীতি ও অনৈতিকতা করে থাকে তার নামসহ সংবাদ প্রকাশ করবেন। দল সেটির ওপর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
গণমাধ্যমের উদ্দেশে রুমিন ফারহানা বলেন, আমরা একটি নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি। যখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় ছিল সে সময় পত্রিকায় কার্টুন ছাপা হতো প্রথম পাতায়। তবে এই কার্টুন আমরা বহুদিন যাবত দেখতে পাই না। কারণ কার্টুন আঁকার পরিবেশ বাংলাদেশে ছিল না। সেই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছি, নতুন বাংলাদেশ দেখার স্বপ্ন রচনা করছি। তাই ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের অনুরোধ করবো সত্যটা তুলে ধরবেন।
তিনি বলেন, সাংবাদিকরা সমাজ ও রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের বাহিরে যে শক্তিশালী স্তম্ভ, যেটি রাষ্ট্রকে মেরামত করে, রাষ্ট্রকে দাঁড় করিয়ে রাখে, রাষ্ট্র ও নাগরিকদের মধ্যে সম্পর্কটাকে মজবুত করে সেই চতুর্থ স্তম্ভই হচ্ছে গণমাধ্যম অথবা সংবাদপত্র। সুতরাং বাংলাদেশের সাংবাদিকদের দায়িত্ব অপরিসীম। গত ১৫ বছর সাংবাদিকরা অনেক চাপে ছিল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, পরিবারের ঝুঁকি নিয়ে গণমাধ্যম সাহসিকতার সঙ্গে সত্যটা প্রকাশ করেছেন।
রুমিন ফারহানা বলেন, মূল ধারার গণমাধ্যমের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। দেশে দেশে যেভাবে স্বৈরাচারী উত্থান হচ্ছে, আমরা ঘরের পাশে নির্বাচিত স্বৈরাচার মোদীকে দেখি, মার্কিন মুলুকের ট্রাম্পকে দেখি, এই ধরনের শাসকরা কিন্তু চেষ্টা করে গণমাধ্যমকে নিজের স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য। সেক্ষেত্রে মূল ধারার গণমাধ্যম তার কারণে বিষয়টি তুলে ধরতে পারেনি, সেটি আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জানতে পারছি।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের সময় অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সাহসী পত্রিকা ছিল ইত্তেহাদ। সেই ইত্তেহাদের সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন আমার পিতা প্রয়াত নেতা অলি আহাদ। এই ইত্তেহাদ পত্রিকাটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে অনেকটাই জড়িত। পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশ করেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, পত্রিকাটিতে কাজ করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীতে এই পত্রিকাটি প্রকাশের দায়িত্ব নেন আমার পিতা। এই পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের কারণে এরশাদ সাহেব বহুবার আমার পিতাকে কারাগারে নিয়েছে। তার আগে ৭২ ও ৭৩ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল সে সময় বারবার পত্রিকাটির প্রকাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সুতরাং আমি নিজেই সাংবাদিক পরিবারের সন্তান। তাছাড়া এই ইত্তেহাদ পত্রিকাটি সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আমি প্রকাশ করছি। পত্রিকাটি সাপ্তাহিক হিসেবে প্রকাশিত হতো এখন এটি দৈনিক হিসেবে প্রকাশ হচ্ছে।
মাজহারুল করিম অভি/আরএআর