বিশ্বাসঘাতকতা করলে ড. ইউনূসকেও ছেড়ে কথা বলব না : সারজিস
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, অন্তর্বর্তী সরকার, সবাইকে অনুরোধ করতে চাই। আমরা কোনো দালাল নয়, আমরা কোনো ক্ষমতা পিপাসু নয়। বিবেকবোধের জায়গায় যদি আমাদের মনে হয় আপনারা কেউ এই অভ্যুত্থানের স্পিরিটের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন, ইভেন প্রফেসর ড. ইউনূসও যদি হন তাকেও আমরা ছেড়ে কথা বলব না।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমিতে হওয়া ‘শহীদ পরিবারের প্রতি বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারের মধ্যে আর্থিক সহায়তার চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কী হবে তা তাদের কাজের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। সম্পর্ক ভালো রাখতে চাইলে ভারতকে খুনি হাসিনাকে আশ্রয় না দিয়ে ফেরত দিতে হবে। এই বাংলাদেশের জনগণ তার বিচার করবে।
এখনো আওয়ামী লীগের অনেক নেতা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সারজিস বলেন, চব্বিশের অভুত্থানের চার মাস পেরিয়েছে। খুনি হাসিনার অন্যতম দোসর নাটোরের খুনি এমপি শিমুল আজও আমাদের সামনে রয়েছে। আজও পাবনার সাঈদ চেয়ারম্যান, এই বাংলাদেশে তার অস্তিত্ব রয়েছে। অথচ এই খুনিরা প্রকাশ্যে আমার ভাইদেরকে পুড়িয়ে মেরেছে, গুলি করে হত্যা করেছে। তাহলে বাংলাদেশের ওই বিচার ব্যবস্থা, পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যারা আছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-বিচার ব্যবস্থার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন যে শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আজকে আপনারা উপদেষ্টা, পুলিশ সুপার, আইজিপি, ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার- তাদের রক্তের সঙ্গে এই বেঈমানি কীভাবে সম্ভব?
তিনি বলেন, এই গণহত্যার সঙ্গে আমরা পুরো বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীকে জড়িয়ে দেব- এই দায়সারা কথা আমরা কখনো বলব না- খুনি হাসিনা হুকুম দিয়েছে বলে আমি গুলি করেছি। হাসিনা যদি গুলি চালানোর হুকুম দেয়, তাহলে একজন ব্যক্তি হিসেবে, একজন মানুষ হিসেবে আপনার বিবেকবোধ, দেশের প্রতি যে আপনি শপথ নিয়েছেন সেই মনুষ্যত্ব, সেই বিবেক বোধ কোথায় ছিল। যারা ওই বিবেকবোধকে, মনুষ্যত্বকে জাজমেন্টটুকু করতে পারেননি, যে কতিপয় কু-পুলিশ সদস্য সরাসরি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল, যাদের হত্যাকাণ্ডের সরাসরি ভিডিও, ছবি, ডকুমেন্টগুলো পাওয়া যায় তাদের কেনো বিচার হচ্ছে না। ওই কতিপয় কু-পুলিশ সদস্যকে পোস্টিংয়ের নামে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়েছে। খুনের শাস্তি কি বদলি? খুনের শাস্তি কি এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বদলি?
সারজিস আলম বলেন, এই বাংলাদেশে আমরা এখনও দেখতে পাচ্ছি- অনেক পুলিশ সদস্য, পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেক অফিসার সেই মামলাগুলো নিচ্ছে না। যে মামলাগুলো তাদের পুলিশের বিভিন্ন সদস্যের নামে রয়েছে। আমরা এখনো দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশে এই মামালাগুলো বিভিন্ন জায়গায় পলিটিক্যাল নেগোসিয়েশন হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ওই খুনি যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের অনেককে টাকার বিনিময়ে, ম্যানপাওয়ারের বিনিময়ে বাঁচানোর জন্য তারা টাকার বিনিময়ে নেগেসিয়েশন করছে। পুরো দেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখতে পাই মামলা বাণিজ্য। এই মমালা বাণিজ্যের সঙ্গে যেমন রাজনৈতিক বিভিন্ন নেতাকর্মীরা জড়িত রয়েছে। তেমনি পুলিশ, প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ নতুন করে আবার কতিপয় পুলিশ সদস্য টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মামলায় নেগেসিয়েশন করছে। আমরা কোনো দিনও এই গণহত্যার জন্য বাংলাদেশের পুরো পুলিশ বাহিনীকে দায়ী করব না। কিন্তু যারাই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল, তাদেরকে আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না। যে যেই হোক, তার পরিচয় যাই হোক। আমাদের কাছে পরিচয় মুখ্য না। তার একমাত্র পরিচয় আমাদের কাছে সে খুনি, সে একজন হত্যাকারী।
এর আগে সারজিস আলম শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের কাছে গিয়ে কথা বলেন। পরে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে রাজশাহী বিভাগের শহীদ পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তার চেক হস্তান্তর করেন। রাজশাহী বিভাগের ৬৩টি শহীদ পরিবারের মধ্যে ৪৬টি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে। প্রতিটি শহীদ পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও রাজশাহী প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বৃন্দসহ ৪৬টি শহীদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
শাহিনুল আশিক/আরএআর