তিন বছরেই আশ্রয়ণের ঘরে ফাটল, শঙ্কায় দিন কাটছে বাসিন্দাদের
শেরপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য তিন বছর আগে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। তিন বছর যেতে না যেতেই ঘরগুলোর এখন বেহাল অবস্থা। বেশিরভাগ ঘরের দেয়ালে ফাটল ধরে প্লাস্টার খুলে পড়তে শুরু করেছে। ফলে যে কোনো সময় দেয়াল ভেঙে পড়ার শঙ্কায় দিন কাটছে বাসিন্দাদের।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামের দরবেশের পুকুর পাড়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পে এমন অবস্থা দেখা গেছে। ভূমিহীন ও গৃহহীন ১৩টি পরিবারকে ২০২১ সালে এখানে ঘর বরাদ্দ দেয় উপজেলা প্রশাসন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৩টি ঘরের মধ্যে ১০টিতে ফাটল ধরেছে। দ্রুত ঘরগুলো মেরামত করা না হলে সেগুলো ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার ও মানসম্মতভাবে ঘরগুলো নির্মাণ না করার কারণে দুই বছরের মধ্যে অধিকাংশ ঘরগুলোর ভেতরে ও বাইরে ফাটল দেখা দিয়েছে।
আশ্রয়ণের বাসিন্দা মালেছা বেগম (৬৮) বলেন, ঘর তৈরির কিছুদিন পর আমার ঘর ভেঙে যায়। পরে অফিস থেকে পুনরায় ঘর করে দেওয়া হয়। তবে এখনো বাথরুম ঠিক করে দেয়নি। পিআইও অফিসের লোকদের বলছিলাম, তারা বলেছে বাজার থেকে কিনে নিতে পারেন না? বারবার অভিযোগ করার পরও তারা ঠিক করে দেয়নি।
আরও পড়ুন
ফজিলা খাতুন (৫০) নামে একজন বলেন, আমাদের থাকার জায়গা ছিল না, ঘর ছিল না। আমার মতো ভূমিহীনদের একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছিলাম। কিন্তু যাদের ঘাড়ে দায়িত্ব ছিল তারা এমন নিম্নমানের কাজ করেছে, দুই বছর পার হতে না হতেই ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই ঘরে কীভাবে থাকমু।
উপকারভোগী রমেলা রাণী (৮০) জানান, সরকারি ঘর পেয়ে খুব খুশি হইছি বাবা। কিন্তু ঘর তৈরিতে সিমেন্ট দিছে অল্প, বালু দিছে বেশি। নিম্নমানের কাজের জন্যই ঘরগুলোতে ফাটল ধরেছে।
আরেক বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিক (৭২) বলেন, আশ্রয়ণের প্রায় প্রতিটি ঘরের ভেতরে ও বাইরে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফাটলের কথা বললে অফিসের লোকজন আজ নয় কাল, কাল নয় পরশু বলে বলে দিন কাটাচ্ছে। আর আমরা বসবাস করছি হতাশা নিয়ে। ঝড় বৃষ্টি হলে ঘরে থাকার উপায় থাকে না। আমরা গরিব মানুষ, সরকার যদি আবার ঘরগুলো ভালোভাবে মেরামত করে দিত তাহলে উপকার হতো।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) আনোয়ার হোসেন শামিম বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অচিরেই ঘরগুলো পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। এরপর তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
নাইমুর রহমান তালুকদার/আরকে