বরখাস্তকৃত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইউএনওর স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ব্যানবেইস পাঠানোর ঘটনায় প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। উপজেলার ছাতুয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাময়িক বরখাস্তকৃত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরমান হোসেন মুকুল ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে পাঠানো ফাইলটি ফেরত আনার জন্য ইউএনও নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, উপজেলার ছাতুয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন সাময়িক বরখাস্তকৃত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরমান হোসেন মুকুল তথ্য গোপন করে ইউএনওর স্বাক্ষর জালিয়াতি করে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজশে তারসহ তিন শিক্ষকের এমপিওভুক্তির জন্য ব্যানবেইস পাঠান। ঘটনাটি ফাঁস হলে উপজেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে মামলার নথিপত্র এবং বরখাস্তের ফাইল থাকলেও তিনি তা আমলে নেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়ার পরই বৃহস্পতিবার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ফাইলটি ফেরত আনার জন্য ইউএনও নির্দেশ দিয়েছেন।
বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি আফজাল হোসেন বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরমান হোসেন মুকুল একাই অনেকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তার স্ত্রীসহ ৯ জনকে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে ব্যানবেইসে ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করেন। ফলে কমিটির সিদ্ধান্তে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভুয়া ও প্রতারক এবং জাল-জালিয়াতির হোতা আরমান হোসেন মুকুলের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউএনও স্যারের কাছে অনুরোধ করছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মমিন মন্ডল বলেন, আমি ইউএনও স্যারের স্বাক্ষর দেখে ফাইলটি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করেছি। এখন ইউএনও স্যারের নির্দেশে ফাইলটি ফেরত আনার পদক্ষেপ নিয়েছি।
পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাদিজা বেগম বলেন, ওই বিদ্যালয়ের মামলা থাকায় ব্যানবেইস প্রেরণের কোনো কাগজে স্বাক্ষর করিনি। আমি অভিযোগ পেয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তর থেকে ফাইল ফেরতের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। আমার স্বাক্ষর নিয়ে প্রতারণা করায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
উল্লেখ্য, সাময়িক বরখাস্তকৃত আরমান হোসেন মুকুল বিদ্যালয়টির পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক হতে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তার দুটি নিয়োগ ও তিনটি যোগদানের তথ্য ব্যানবেইস ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ ছাড়া তিনি স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তার স্ত্রী রোকসানা বেগমসহ ৯ জনকে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে ব্যানবেইস ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করেন। পাশাপাশি গত বছর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর জালিয়াতি করে মুকুল তারসহ তিনজন শিক্ষকের বেতন-ভাতার জন্য এমপিওভুক্তির কাগজপত্র পাঠালে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর কমিটি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। পাশাপাশি তিনটি মামলাও করে।
তারপরও সাময়িক বরখাস্তকৃত ওই শিক্ষক তথ্য গোপন করে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড থেকে এডহক কমিটি গঠনের জন্য পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে ভুয়া অভিভাবক সদস্য মনোনয়ন নেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় রংপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া এবং দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডকে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউএনও নির্দেশনা দিয়েছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরমান হোসেন মুকুল বলেন, আমি কেন ইউএনও স্যারের স্বাক্ষর জালিয়াতি করব, এটা মিথ্যা অভিযোগ। আমি কয়েকজন শিক্ষকসহ ইউএনও স্যারের কাছে গিয়েছিলাম। সেখানে স্যার আমাদের বিলের কাগজে প্রতিস্বাক্ষর করেছে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখলে তো সব দেখা ও বোঝা যাবে। অহেতুক আমাকে বিতর্কিত করার জন্য এসব অভিযোগ আনা হয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে