বাগেরহাটে বাল্যবিবাহ বন্ধে ‘সম্ভাবনার উৎসব’
বাগেরহাটে বাল্যবিবাহ বন্ধে কিশোরী ও অভিভাবকদের সচেতন করতে সম্ভাবনার উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যতিক্রমী এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে বাল্যবিবাহ না করে, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে বাগেরহাট শহরের খানজাহান আলী ডিগ্রি কলেজ মাঠে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, ইউনিসেফ ও ইউএনএফপিএর যৌথ আয়োজনে এই উৎসব শুরু হয়।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও আয়োজকদের পদচারণায় মুখরিত হয় সম্ভাবনার উৎসব প্রাঙ্গণ। উৎসবে আসা চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, গণমাধ্যম, শিক্ষা, মৎস্য, কৃষি, খেলাধুলা, ফ্রিল্যান্সিং, মোবাইল গেমিংসহ বিভিন্ন খাতের ২০টি পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানের স্টল ঘুরে বাল্যবিবাহের কুফল ও সফল মানুষ হওয়ার জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানেন শিক্ষার্থীরা। ভবিষ্যতে বাল্যবিবাহ না করে সফল মানুষ হওয়ার অঙ্গীকার করেন উৎসবে আগত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদেরকে বাল্যবিবাহের কুফল ও পুলিশ, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার উপায় সম্পর্কে জানান পেশাজীবীরা।
দুপুরের দিকে ইউনিসেফ ও ইউএনএফপিএর প্রতিনিধি হিসেবে নেদারল্যান্ড, আমেরিকা, নিউজিল্যান্ডসহ ছয়টি দেশের ৩০ জন প্রতিনিধি উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। স্টলগুলো ঘুরে দেখে, শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। ব্যতিক্রমধর্মী এই উৎসবে আসতে পেরে আনন্দিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
ফকিরহাট উপজেলার নলধা বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিউলি আক্তার বলেন, এ ধরনের উৎসবে আসার সুযোগ আমাদের খুবই কম। এখানে এসে অনেক ভালো লেগেছে। বাল্যবিবাহের যেসব ক্ষতিকর দিক এবং বাল্যবিবাহ কীভাবে একটি মেয়ে ও তার পরিবারকে ধ্বংস করে দেয় সে বিষয়টি জানতে পেরেছি। তা ছাড়া মাধ্যমিক শেষ করার পরে উচ্চ শিক্ষা ও পেশাগত জীবনের নানা দিকনির্দেশনা পেয়েছি। যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে, আমার বন্ধুদেরও বিষয়টি জানাতে পারব।
নিজের মেয়েকে নিয়ে আসা আব্দুল কাদের নামের এক অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। মেয়ের বিয়ের জন্য এখনই অনেকে প্রস্তাব দিচ্ছে। এখানে এসে মেয়ের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটি সঠিক ধারণা পেলাম। মেয়েকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে সব ধরনের চেষ্টা করার অঙ্গীকার করেন এই অভিভাবক।
উৎসবে আগত শিক্ষার্থীরা সাদা দেওয়ালে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা লিখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপপরিচালক সাহেলা পারভীন বলেন, বাল্যবিবাহে ঝুঁকিপূর্ণ সারা দেশে প্রথম তিনটি জেলার মধ্যে বাগেরহাট রয়েছে। এখানে জেলার ৯টি উপজেলার শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করেছেন। বিদেশি প্রতিনিধিরা তাদের অভিজ্ঞতা বিনিমিয় করেছেন। বাগেরহাটে প্রথমবারের এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা তাদের নিজ এলাকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এই উৎসবের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন। যা বাল্যবিবাহের প্রবণতা কমাতে সহযোগিতা করবে বলে মনে করেন তিনি।
শেখ আবু তালেব/এএমকে