রাতের আঁধারে নদীর মাঝে চলে গেছে গাছ, এলাকায় চাঞ্চল্য
বরগুনায় হঠাৎ করে রাতের আঁধারে আস্ত একটি চালতা গাছ নদীর মাঝে চলে গেছে। শুধু তাই নয়, গাছটি পাড় থেকে নদীর মাঝে গিয়েও দিব্বি দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গাছটি এক নজর দেখতে ভিড় করছে উৎসুক জনতা। কেউ কেউ বলছেন, জিন-পরীর মাধ্যমে এ ঘটনা ঘটেছে। আবার কেউ বলছেন, নদীর পাড় ভেঙে গাছটি নদীর মাঝে চলে গেছে।
বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া নামক এলাকার খাকদোন নদীতে এ ঘটনা ঘটেছে। সরেজমিনে ঘটনাস্থল ঘুরে জানা যায়, গত বুধবার (৪ ডিসেম্বর) রাতের যে কোনো সময় পাড় থেকে আস্ত ওই চালতা গাছটি খাকদোন নদীর মাঝে চলে গিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা কেউ এ ঘটনাটি সরাসরি না দেখায় এলাকাজুড়ে এক প্রকার চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের ধারণা, এটি একটি অলৌকিক ঘটনা, জিন বা পরীরা গাছটিকে নিয়ে গেছে নদীর মাঝে। অনেকে আবার বলছেন, ভাঙন এলাকা হওয়ায় পাড় ভেঙে গাছটি নদীর মাঝে চলে গেছে।
তবে নদীর মাঝে গিয়েও চালতা গাছটি দিব্বি দাঁড়িয়ে রয়েছে। এমনকি দুই পাশ থেকে ছোট-বড় নৌকা, ট্রলার ও লঞ্চ চলাচলের পরও সেখান থেকে এক বিন্দুও সরছে না গাছটি। এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় ওই চালতা গাছটি এক নজর দেখতে ভিড় করছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা নানা বয়সী নারী-পুরুষ ও স্থানীয়রা। স্মৃতি সংরক্ষণ করতে কেউ কেউ ছবি তুলছেন, আবার কেউ করছেন ভিডিও।
সাকিবুল ইসলাম নামে ঢলুয়া এলাকার স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলে, সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় চালতা গাছটিকে নদীর মাঝে দেখতে পাই। এলাকার অনেকে বলছে রাতের আঁধারে অলৌকিকভাবে গাছটি নদীর মাঝে চলে গেছে। যেহেতু নদীর মাঝে গিয়েও দাঁড়িয়ে আছে এটি অলৌকিক কোনো ঘটনা অথবা জিনের মাধ্যমেও হতে পারে।
চালতা গাছটি দেখতে এসে মো. শহীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, অলৌকিকভাবে অথবা নদীর জোয়ার ভাটার কারণে গাছটি পাড় থেকে নেমে যেতে পারে। গাছের নিচে শক্ত মাটি থাকায় গাছটি হয়তো দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। তবে কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা জানি না।
রাফাত নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাতের আঁধারে গাছটি নদীর মাঝে নেমে যাওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে এলাকার বয়স্করা বলছেন এটি অলৌকিক ঘটনা, জিন-পরীরা গাছটিকে নামিয়ে নিয়ে গেছে। তবে আমার ধারণা এমন কিছু না। নদী ড্রেজিংয়ের ফলে পাড় থেকে গাছটি নদীর মাঝে চলে গেছে।
রাকিব নামে একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এলাকার অনেকে মনে করছেন অলৌকিকভাবে চালতা গাছটি নদীর মাঝে চলে গেছে। আসলে এটি সঠিক নয়, নদীর স্রোত এবং জায়গাটি ভাঙন কবলিত হওয়ায় পাড় ভেঙে গাছটি নদীর মাঝে চলে গেছে। যারা অলৌকিক ঘটনা হিসেবে ভাবছেন তা ভিত্তিহীন বলে মনে হয়।
গাছটি দেখতে আসা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে মো. মজনু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার জানা মতে ঘটনাটি অলৌকিক কোনো ঘটনা নয়, জিন-ভূত কিছুই নেই। মূল বিষয় হচ্ছে গাছের শিকড়ের মাটিসহ পাড় ভেঙে গিয়ে গাছটি নদীর মাঝে নরম কাদামাটিতে গেড়ে যাওয়ায় দাঁড়িয়ে আছে। পানির স্রোতে গাছটির মাটি যখন সরে যাবে তখন এমনিতেই ওই গাছটি পড়ে যাবে। এখানে জিন-ভূতের কোনো বিষয় নেই।
বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিটির বরগুনা জেলা শাখার সদস্য এবং ওয়াটার্স কিপার আমতলী ও তালতলী উপজেলার সমন্বয়ক আরিফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে খাকদোন নদীতে ড্রেজিং করায় নদীর পাড় খারা হয়ে গেছ। এ কারণেই পাড় ভেঙে বেশি মাটিসহ গাছটি নদীর মাঝে চলে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নদী ভাঙন এবং অপরিকল্পিত নদী খননের ফলে এ ঘটনা ঘটেছে। এটি কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়।
আব্দুল আলীম/আরএআর