চবি শিক্ষার্থী ফরহাদের মরদেহ উত্তোলনে পরিবার ও এলাকাবাসীর বাধা
মাগুরায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন (২৫) শহরের পারনান্দুয়ালী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। পরে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাকে দাফন করা হয়।
হত্যার ঘটনায় মাগুরা সদর থানায় মামলা করা হলে ময়নাতদন্তের নির্দেশে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) মরদেহ উত্তোলনে গেলে ফরহাদের পরিবার ও এলাকাবাসী আপত্তি জানায়। এতে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন না করেই বেশ কয়েক ঘণ্টা পর ফিরে যান এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আদালতের নির্দেশে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ফরহাদ হোসেনের মরদেহ উত্তোলনের জন্য শ্রীপুর উপজেলার রায়নগর কবরস্থান যায় সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোজাহিদুল ইসলাম, শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইদ্রিস আলী, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্যরা সহ সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু মরদেহ উত্তোলনে নিহত ফরহাদের পরিবার আপত্তি জানায়। এ অবস্থায় কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও মরদেহ উত্তোলন না করেই ফিরে যান জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট।
নিহত ফরহাদের মা মোছা. শিরিনা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে কবর থেকে যেন আর উঠানো না হয়। আর যদি বিশেষ দরকার হয় আমাকে লাশ করে ওই কবরে রেখে উঠিয়ে নিয়ে যান। এছাড়া আমার আর কিছুই বলার নেই।
নিহত ফরহাদের বড় ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী গোলাম কিবরিয়া বলেন, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমার ভাই শহীদ হয়। আমার ভাইকে মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল নেওয়া হয় সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাকে ময়নাতদন্ত করতে আস্বীকৃতি জানায়। আমরা এক প্রকার বাধ্য হয়ে তার মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসি এবং রায়নগর পশ্চিম পাড়া কবরস্থানে দাফন করি। এরপরে আমরা পারিবারের সবাই মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ছিলাম। আমার আম্মা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ রয়েছেন। আমরা পারিবারিকভাবে কোনো মামলা করিনি। পরে আমরা জানতে পারি প্রায় দেড়শ জনকে আসামি করে অন্য একজন ব্যক্তি মামলা করেছেন।রাজনৈতিক বা কি উদ্দেশে তিনি মামলা করছেন আমি জানি না। আমরা জানতে পেরেছি এই মামলা নিয়ে বাণিজ্য চলছে। আমরা এটা কোনোভাবেই সমর্থন করি না। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি মামলা বাণিজ্য নিয়ে যেন তদন্ত করা হয় দোষীদের যেন আইনের আওতায় আনা হয়। আজ এ মামলার কারণে আদালতের নির্দেশে পুলিশ এসেছে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য। আমরা পরিবার থেকে এবং এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি ফরহাদের মরদেহ উত্তোলনের পক্ষে আমরা নই। এ ব্যাপারে আমরা সহযোগিতা করতে পারব না।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো.মোজাহিদুল ইসলামসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মাগুরা সদর থানা সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে রেকর্ডভুক্ত মামলাটিতে মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর এবং মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীরেন শিকদার ছাড়াও সুনির্দিষ্ট ৬৭ জন এবং অজ্ঞাত ১০০/১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ মামলার তদন্তের স্বার্থে আদালতের নির্দেশে সোমবার ফরহাদের মরদের ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন করতে রায়নগরে গিয়েছিলেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।পরে ফরহাদের পরিবার ও এলাকাবাসী অস্বীকৃতি জানালে বেশ কয়েক ঘণ্টা পর মরদেহ উত্তোলন না করেই ফিরে যান তারা।
প্রসঙ্গত, মাগুরা সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়নের উত্তর বীরপুর গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে জামাল হোসেন বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন। তবে মামলা সম্পর্কে নিহতের পরিবারের কারও সঙ্গে বাদীর কথা হয়নি বলেও ফরহাদের পরিবার নিশ্চিত করেছে।
তাছিন জামান/আরকে