পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রিমান্ডের হুমকি দিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ
ফেনীর সোনাগাজীতে রিমান্ডের হুমকি দিয়ে আরমান হোসেন নামে এক আসামির পরিবার থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শরীফ হোসেনের বিরুদ্ধে। রোববার (৮ ডিসেম্বর) নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে সোনাগাজী থানায় করা এক মামলার সম্পৃক্ততার অভিযোগে আরমানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ভুক্তভোগীর স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোনাগাজীর মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভোয়াগ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা দুদু মিয়ার ছেলে আরমান হোসেন ও পাশ্ববর্তী বাড়ির একরামুল হকের মেয়ে জাহারা আক্তার জুথীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর পরিবার সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় প্রেমিক-প্রেমিকা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) জুথির মা সেলিনা বেগম সোনাগাজী মডেল থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তারই প্রেক্ষিতে প্রেমিক যুগলকে উদ্ধারে আরমানের বন্ধু আল আমিন ও সাখাওয়াতের সহযোগিতা চান সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক শরীফ হোসেন। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) তাদের নিয়ে ঢাকার পল্লবী থানা এলাকায় গিয়ে আরেক বন্ধু আরমানকে ডেকে আনেন এসআই শরীফ। পরে বন্ধু আরমানকে সেখানে বেধড়ক মারধর করে প্রেমিক যুগলকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন পুলিশের এ কর্মকর্তা। একপর্যায়ে বন্ধু আরমান তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানাতে ব্যর্থ হলে তাকে আটক করে ঢাকা থেকে সোনাগাজী থানায় নিয়ে আসা হয়।
আল আমিন নামে তাদের এক বন্ধু বলেন, “এসআই শরীফ আমাদের বন্ধু আরমান ও তার প্রেমিকা জুথির অবস্থান জানতে সহযোগিতা চেয়ে আমাকে ও সাখাওয়াতকে সোনাগাজী থেকে ঢাকায় নিয়ে যায়। আগে থেকে ঢাকায় অবস্থান করা আমাদের অন্য এক বন্ধু আরমানকেও সেখানে ডেকে আনেন তিনি। পরে পল্লবী থানায় নিয়ে তার কাছে পালিয়ে যাওয়া বন্ধু আরমান ও প্রেমিকার অবস্থান জানতে চান। কিন্তু আরমান তাদের অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে না পারায় এসআই শরীফ তাকে মারধর শুরু করেন। তাকে চড়-থাপ্পড়, লাথি ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে আহত করে পরে সোনাগাজী মডেল থানায় নিয়ে আসে। সহযোগিতা চেয়ে ডেকে নিলেও পরবর্তীতে আবার সোনাগাজী থানায় আমাদের আসামি করে মামলা হয়েছে জেনে অবাক হয়েছি।”
এ ব্যাপার গ্রেপ্তার আরমানের বড় ভাই আরাফাত হোসেন বলেন, “আমার ভাই ঢাকার একটি মোবাইল দোকানে চাকুরি করেন। পুলিশ সহায়তার কথা বলে ডেকে এনে আমার নিরপরাধ ভাইকে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। ঢাকা থেকে সোনাগাজী নিয়ে আসার পর আমার ভাই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসআই শরীফ ভাইকে রিমান্ডে নেওয়ার হুমকি দিয়ে দুই দফায় আমার কাছ থেকে ৩২ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।”
তিনি বলেন, “সোমবার (৯ ডিসেম্বর) আমার ভাইয়ের সঙ্গে কারাগারে দেখা করেছি। পুলিশের মারধরের কারণে আরমান ঠিকমতো হাঁটতেও পারছে না। আমার নিরপরাধ ভাইয়ের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি চাই।”
সহায়তার কথা বলে ডেকে নিয়ে মামলা ও পরবর্তীতে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক শরীফ হোসেন বলেন, “সোনাগাজীর এএসপি (সার্কেল) তসলিম হুসাইনের নির্দেশে আমি সবকিছু করেছি। আরমানকে ঢাকা থেকে ৭ ডিসেম্বর নিয়ে এসেছিলাম। পরদিন ৮ ডিসেম্বর সোনাগাজীর সার্কেল এএসপির নির্দেশে সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ মামলা নিয়েছেন।”
রিমান্ডের হুমকি দিয়ে টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, “আমি কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নেইনি। এ অভিযোগ মিথ্যা।”
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বায়েজিদ আকন বলেন, “আরমান হোসেন ও জাহারা আক্তার জুথিকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করায় তাকে (বন্ধু আরমান) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মারধরের বিষয়টি সত্য নয়। ঢাকা থেকে আনার পরও মারধরের বিষয়টি আমার চোখে পড়েনি।”
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার অর্থ আদায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে ওসি বলেন, “এ ব্যাপারে আমাকে কেউ অবগত করেনি। আসামি পক্ষের লোকজন নিজেদের বাঁচাতে সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে অনেক কথা বলেন। টাকা আদায়ের বিষয়টিও সেরকম মনে হচ্ছে। তারপরও এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে।”
তারেক চৌধুরী/এসএমডব্লিউ