চাঁপাইনবাবগঞ্জে পেঁয়াজ চাষে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা
চাঁপাইনববাগঞ্জের সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শীতকালীন আগাম কন্দ পেঁয়াজ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কম হলে এবং সঠিক দাম পেলে লাভ হবে বলে আশা করছেন তারা।
সরজমিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বছর পেঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় এই বছর অনেক কৃষক নতুন করে পেঁয়াজ আবাদ করছেন। কিন্ত কৃষি অফিস থেকে পর্যাপ্ত সহোযোগিতা পেলে তারা এই পেঁয়াজ চাষে আরোও লাভবান হবেন এবং পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়বে বলেও জানান কৃষকেরা। তবে সদর উপজেলা কৃষি অফিস জানান, সরকারী কৃষি প্রণোদনা কম হওয়ার কারনে বেশির ভাগ কৃষককে সার ও বীজ দেওয়া সম্ভব হয় না এবং লোকবল সংকটের কারণে কৃষি পরামর্শ দিয়ে সহোযোগিতা করতেও হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে মোট পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে যার মধ্যে ৫১০ হেক্টর কন্দ জাতের পেঁয়াজ এবং এ উপজেলায় মোট আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৭৫০ মে.টন যার মধ্যে কন্দ জাতের পেঁয়াজ ৮৬৭০ মে.টন। যা গত বছরের তুলনায় এ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে।
খাইরুল ইসলাম নামে এক কৃষক বলেন, “গত বছর আমি ১৫ কাঠা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলাম এবং এক লাখ টাকা মতো লাভ হয়েছিল। এবার ২৫ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ রোপন করিছি। আল্লাহ ভাগ্যে রাখলে আশা করছি লাভ হবে। কৃষি অফিস থেকে এই পর্যন্ত কোন কিছু পায়নি। আমরা গরীব মানুষ তাই আপনাদের মাধ্যমে আহবান জানাচ্ছি, আমাদেরকে যেন কিছু অনুদান দেয়।”
পেঁয়াজ চাষী মোজাম্মেল বলেন, “গত বছর দুই বিঘাতে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলাম তাতে তিন লাখ টাকা মতো পেঁয়েছিলাম। এই বার কেমন লাভ হবে আগেই বলতে পারছি না তবে আশা আছে লাভ হবে।”
সানাউল্লাহ নামে আরেকজন পেঁয়াজ চাষী বলেন, “দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। পেঁয়াজ গুলো খুব সুন্দর হয়েছে। লাভের আশাতে পেঁয়াজের আবাদ করছি তারপরেও আল্লাহ ভরসা ভালো দাম পেলে লাভবান হতে পারবো। এছাড়া দেড় বিঘা মতে পেঁয়াজের ফুল (ফুলকা) করেছি। আশা করি তাতেও লাভ হবে।”
পেঁয়াজ চাষী শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি গতবার পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম এবং কিছু লাভবান হয়েছিলাম। এবারও তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছি। আল্লাহর কাছে আশা করছি যে কিছুটা লাভবান হতে পারবো ইনশাআল্লাহ।”
তিনি আরোও বলেন যে এই পর্যন্ত কৃষি অফিস থেকে কোন সহোযোগিতা পাননি তিনি। এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতাও কামনা করেছেন শফিকুল ইসলাম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: সুনাইন বিন জামান বলেন, “বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সদর উপজেলায় কন্দ পেঁয়াজের চাষ হয়েছে ৫১০ হেক্টর জমিতে। আশা করি প্রতি হেক্টরে ১৭ মে..টনের মতো পেঁয়াজ উৎপাদনে হবে অর্থাৎ প্রতি বিঘায় ৫৫ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজোর ফলনের আশা করছি।”
কৃষকদের সহযোগিতা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমরা কৃষককে টাইম টু টাইম পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় কৃষকদের সাথে কথা বলছে এবং পরামর্শ দিচ্ছে। পেঁয়াজের আগা মরা রোগ কিভাবে নিয়ন্ত্রন করা যায় সে ব্যাপারে সর্বদা পরামর্শ দিয়ে থাকছি। আশা করছি কৃষকরা তাদের ফলনের কাঙ্খিত দাম পাবেন।”
কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি আরোও বলেন, “এই বছর আমরা মাত্র ৯০ জনকে প্রণোদনা হিসেবে পেঁয়াজের সার ও বীজ দিতে পেরেছি এবং ২০ জনকে প্রদর্শণী দিয়েছি। কিন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় কৃষক পরিবার আছে ৮৮ হাজার। তাই সবাইকে সরকারী প্রণোদনার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। ভবিষ্যৎতে যদি এটা (প্রণোদনা) বাড়ানো হয়ে তবে আরোও বেশি কৃষককে দিতে পারবো।”
“এছাড়া আমাদের এখানে ৪৩ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা থাকার কথা কিন্ত বর্তমানে আছেন ৩১ জন। এর মধ্যে কিছু মেটানিটি লিপে আছে। তাই সব মিলিয়ে কৃষি কর্মকর্তা মাঠে আছেন মাত্র ২২ জন। আর এই ২২ জনের পক্ষে টাইম টু টাইম এবং ঘরে ঘরে গিয়ে কৃষি পরামর্শ দেওয়া সম্ভব হয় না। তারপরেও আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় মাঠে থাকছেন এবং আমাদের উপজেলা কৃষি অফিস ৯ থেকে ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তাই কারো কোন প্রয়োজন হলে অফিসে এসে পরামর্শ নেওয়ার অনুরোধ করছি।”
প্রসঙ্গত, কন্দ জাতের পেঁয়াজ সাধারনত অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে রোপন করা হয় এবং এই পেঁয়াজ ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাজারে পাওয়া যাবে।
মো: আশিক আলী/এসএমডব্লিউ