শীতের আমেজে কুমড়ো বড়ি তৈরি, কেজিতে লাভ ৮০ টাকা
খাবারের স্বাদ ও পুষ্টি বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে কুমড়া বড়ি। প্রতিবছরের মতো এবারের শীতেও এই কুমড়া বড়ি তৈরিতে ব্যস্ততা বেড়েছে নওগাঁর নারীদের। যা তাদের বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। মানসম্মত হওয়ায় বাজারে চাহিদাও ব্যাপক এ অঞ্চলে উৎপাদিত কুমড়া বড়ির।
সম্প্রতি শহরের সুলতানপুর মহল্লার কুমড়া বড়ি পাড়ার কয়েকটি চালকলে গেলে দেখা যায়, সেখানে একযোগে এই বড়ি তৈরির উৎসবে মেতে উঠেছেন স্থানীয় নারীরা। তাদের সঙ্গে একজন পুরুষ কারিগরকেও সহযোগিতা করতে দেখা যায়। এর প্রক্রিয়ায় প্রথমে কুমড়া, মাষকলাই ডাল এবং মসলা মিশিয়ে তৈরি করা হয় বড়িগুলোর মিশ্রণ। পরে তা তিন-চার দিন রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করে বিক্রি করা হয় পাইকারদের কাছে। তবে গতবছরের তুলনায় মাষকলাই ডালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর তুলনামূলক কম লাভ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কারিগররা।
সুলতানপুর সাহা পাড়ার নারী কারিগর শ্রীমতি ভারতী রানী সাহা বলেন, শীতের শুরু থেকে আমরা বড়ি তৈরি করি। সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বড়ি তৈরির কাজ করি। আকাশে রোদ ভালো থাকলে তিন-চার দিন সময় লাগে বড়ি তৈরি হতে। আকাশ মেঘলা অথবা রোদ কম হলে বড়ির সমস্যা হয়, কম রোদে শুকানো বড়ির দাম বাজারেও কম। বছরে চার মাস বড়ি তৈরি করে সংসারের জন্য বাড়তি আয় হয়।
কাঞ্চন রাণী সূত্রধর নামে এক কারিগর বলেন, এক কেজি মাষকলাই থেকে ৬০০ গ্রাম বড়ি তৈরি হয়। কালাই ভাঙানো, মসলা খরচসহ ৬০০ গ্রাম বড়ি তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ১৬০ টাকার মতো হয়। বাজারে প্রতি কেজি বড়ি ৩৭০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি করি। খরচ বাদ দিয়ে প্রতি কেজি বড়িতে প্রায় ৭০-৮০ টাকা করে লাভ হয়।
নওগাঁ শহরের সুলতানপুর সাহা পাড়ার আরেক কারিগর গৌর চন্দ্র সাহা বলেন, বাজার থেকে ডাল কিনে এনে রোদে শুকনার পর জাতার সাহায্যে ভাঙ্গি। রাত ১২টার দিকে ডাল ভিজিয়ে রাখতে হয়। ভোরে ডাল পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে চটের বস্তায় ঘষে খোসা ছড়াই। এরপর মসলা, কলাই জিরা এসব একসঙ্গে মিশিয়ে বড়ি তৈরি হয়।
তিনি আরও বলেন, কুমড়ো বড়ি তৈরি আমাদের আদি পেশা, আমাদের বাপ-দাদারা এই ব্যবসা করে আসছেন, এখন আমরা করি। এইটার ওপর দিয়েই আমাদের এক রকম জীবিকা নির্বাহ হয়। গতবছর কালায়ের দাম কম ছিল, এ বছর দাম বেশি হওয়ায় লাভ কিছুটা কম হচ্ছে। ডাল ভাঙাতে কেজিতে আট টাকা করে নেয়, ডাল ফনানোতেও কেজিতে আট টাকা করে নেয়। সবাইকে দিয়ে-থুয়ে চলতেছে আরকি।
সুলতানপুর কালিতলা এলাকার কারিগর শিখা রাণী সাহা বলেন, আমরা যারা নিম্নবিত্ত পরিবারের আছি প্রায় সবাই বছরের চার মাস বড়ির ব্যবসা করি। সংসারের কাজের পাশাপাশি অবসর সময়ে এই ব্যবসা থেকে বাড়তি আয় হচ্ছে।
নওগাঁ বিসিক শিল্প নগরীর উপব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গৃহস্থালির পাশাপাশি কুমড়া বড়ি তৈরি করছেন গৃহবধূরা। এতে বাড়তি আয়ে তাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। তাদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং স্বল্প সুদে ঋণসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
মনিরুল ইসলাম শামীম/এএমকে