নানা আয়োজনে নেত্রকোণা ট্র্যাজেডি দিবস পালিত
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ রোববার (৮ ডিসেম্বর) পালিত হয়েছে নেত্রকোণা ট্র্যাজিডি দিবস।
২০০৫ সালের এই দিনে শহরের অজহর রোডে জেলা উদীচী কার্যালয়ের সামনে জেএমবির আত্মঘাতী বোমা হামলায় আটজন নিহত হয়েছিলেন। ওই হামলায় আহত হয়েছিল আরও অর্ধশতাধিক মানুষ।
এ উপলক্ষে রোরবার সকালে কালো ব্যাজ ধারণ, উদীচী কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, নিহতদের স্মরণে নির্মিত শহরের অজহর রোডে স্মৃতি স্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে স্মৃতিচারণ ও গণসংগীত পরিবেশন করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও শতদল শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্যরা।
সকাল ১০টা ৪০ মিনিট থেকে ১০টা ৪২ মিনিট পর্যন্ত নিহতদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের সামনে দাঁড়িয়ে দুই মিনিট ‘স্তব্ধ নেত্রকোণা’ কর্মসূচি পালন করা হয়। ট্র্যাজিডি দিবস উদযাপন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এসব কর্মসূচিতে সব স্তরের মানুষ অংশ নেয়।
সকালে নিহতদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন।
নেত্রকোণা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ দেশের মানুষ আশা করেছিল বৈষম্যহীন সমাজ হবে, এ দেশ অসাম্প্রদায়িক হবে। দেশের সব মানুষ আনন্দে থাকবে, সব মানুষের পেটে খাবার জুটবে, চিকিৎসা পাবে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছরে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সেই আকাঙ্ক্ষা আমরা পূরণ করতে পারিনি। এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো তা পূরণ করতে পারে নাই। যে কারণে বিভিন্ন সময়ে আমাদের দেশে গণমানুষের পক্ষে আন্দোলন হয়েছে, গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। এমন করে অভ্যুত্থান হয়, নতুন করে সরকার আসে। আবার সেই সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে জাগ্রত হতে হয়। এভাবেই আমাদের ৫৩ বছর পেরিয়ে গেছে।
আমরা শিল্পী-সাহিত্যিক, প্রগতিশীল, মুক্তচিন্তার মানুষরা মনে করি, এ দেশে স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও বৈষম্যহীন একটা সমাজ আমরা চাই। সেই সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য আজকে মানুষ জেগেছে।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোণা হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার জন্য উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কার্যালয়ে রিহার্সালের সময় আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায় তৎকালীন জঙ্গি সংগঠন জেএমবি।
ওই হামলায় উদীচীর তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাজা হায়দার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুদীপ্তা পাল শেলী, মোটরসাইকেল মেকানিক যাদব দাস, রানী আক্তার, ভিক্ষুক জয়নাল, আফতাব উদ্দিন, রইছ মিয়া নিহত হন। পাশাপাশি নিহত হন ওই বোমা হামলায় আত্মঘাতী হামলাকারী এক কিশোর। এ ছাড়া আহত হয়েছিল আরও অর্ধশতাধিক সাধারণ মানুষ।
এরপর থেকে প্রতিবছর ৮ ডিসেম্বরকে নেত্রকোণা ট্র্যাজিডি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে নেত্রকোণাবাসী।
চয়ন দেবনাথ মুন্না/এএমকে