বিএসএফের গুলিতে নিহত আনোয়ার, অনিশ্চিত সন্তানের ভবিষ্যৎ
‘বৃহস্পতিবার রাতে একসঙ্গে বসে ভাত খাইলাম। ওই সময় কার যেন একটা ফোন আসলো। ফোন ধরে ও শুধু বললো, তোমরা থাকো, কিছুক্ষণ পর আসতেছি, বলেই সে চলে গেল। সারারাত আর আসলো না। মেয়েটারে স্কুলে ভর্তি করাতে চাইছিলাম, এখন মানুষটাই নাই। এখন কী হবে?’
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে স্বামী হারানোর শোকে ছয় বছর বয়সী মেয়েকে জড়িয়ে ধরে এভাবেই কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের বলছিলেন বিএসএফের গুলিতে নিহত আনোয়ারের স্ত্রী লিপি আক্তার।
শনিবার বিকেলে নিহত আনোয়ার হোসেনের (৩৬) তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের আমজুয়ানী এলাকায় পারিবারিক গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
আনোয়ার হোসেন ওই এলাকায় রফিকুল ইসলাম ও আনোয়ারা বেগমের ছেলে। মাত্র ৭ শতক ভিটেবাড়ি ছাড়া আর কোনো জয়গা জমি নেই। বাবা রফিকুল ইসলাম স্থানীয় বাজারে ছোট্ট মাংসের দোকান করেন। আনোয়ার হোসেন দর্জি কাজের পাশাপাশি দিনমজুরের কাজও করতেন।
আনোয়ারের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, খুবই কষ্ট করে মানুষ করলাম। কখনো কল্পনাও করি নাই, এভাবে আমার এক ছেলে মারা যাবে। এখন নাতনিটার কী হবে। এতিম হয়ে গেল।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশি কয়েকজন যুবকের সঙ্গে আনোয়ারও ভারতে গরু আনতে যায়। পরে ভোরের দিকে গরু নিয়ে ফেরার পথে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের মোমিনপাড়া ও ভারতের শিংপাড়া সীমান্তের মেইন পিলার ৭৫১ এর ৮ ও ৯ নং সাব পিলারের মাঝামাঝি এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী (বিএসএফ)’ ৯৩ ব্যাটালিয়নের চানাকিয়া ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে গুলি করলে আনোয়ার মারা যায়। পরে তার মরদেহ বিএসএফ নিয়ে যায়। এদিকে গুলির শব্দ পেয়ে চোরাকারবারিদের প্রতিহত করতে ৮ রাউন্ড গুলি ফাঁকা ফায়ার করেন ঘাগড়া বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা। একটি গরুও আটক করা হয়।
ঘটনার পর নীলফামারী ৫৬-বিজিবি ব্যাটালিয়ন বিএসএফের কাছে জোরালো প্রতিবাদলিপি পাঠায়। দুপুরে ব্যাটালিয়নের কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিজিবির কাছে নিহত আনোয়ারের মরদেহ হস্তান্তর করে বিএসএফ। পরে পুলিশের কাছে বিজিবি মরদেহ হস্তান্তর করলে ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপরের পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। পরে বিকেলে তার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ মরদেহ দাফনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে আনোয়ারের লাশ হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল রাতেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
এসকে দোয়েল/আরকে