রামরঙ্গন কমলা চাষে স্বপ্নপূরণ, ১০ লাখ টাকা বিক্রির আশা
রামরঙ্গন জাতের কমলা চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন যশোরের শার্শা উপজেলার পানবুড়িয়া গ্রামের ওহিদুজ্জামান। তিনি নার্সারি ব্যবসার পাশাপাশি রামরঙ্গন জাতের কমলা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। টেলিভিশনে প্রতিবেদন দেখে এই জাতের কমলা চাষে আগ্রহী হন তিনি। তার কমলার বাগান দেখতে অনেক মানুষ দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে। ফলন ভালো হওয়ায় এই জাতের কমলা চাষে তারাও আগ্রহী হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, এই এলাকার আবহাওয়া ও মাটি রামরঙ্গন কমলাসহ বিভিন্ন ফল চাষে উপযোগী। এখানে ফলন ভালো হয়।
ভারত ও চীনে ব্যাপকভাবে রামরঙ্গন জাতের কমলা চাষ হয়। আমদানিকৃত রামরঙ্গন কমলা লেবুর চেয়ে এলাকায় উৎপাদিত ফল মিষ্টি ও সুস্বাদু। সামান্য কিছু পরিচর্যা করলেই চাষে সাফল্য আসে। রামরঙ্গন কমলা চাষে পোকামাকড়ের আক্রমণও কম। একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছ থেকে এক মৌসুমে দেড় মন থেকে দুই মন রামরঙ্গন কমলা পাওয়া সম্ভব। রামরঙ্গন কমলা গাছ পাঁচ-ছয় ফুট লম্বা হয়। এটা কমলার একটি ভ্যারাইটি জাত। এই জাতের কমলা চাষে সুবিধা হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ পরিপক্ব হওয়ার পরও এটা গাছ থেকে ঝরে পড়ে না। পরিপক্কের পরও অন্তত ফলটি এক মাস গাছে রাখা যায়। দুই বছরের মধ্যে এই গাছ ফলন দেয়।
কমলা চাষি ওহিদুজ্জামান জানান, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই বিঘা জমি ১০ বছর মেয়াদে বর্গা নিয়ে ১৯৬টি রামরঙ্গন চায়না কমলার চারা রোপণ করেন তিনি। সে সময় তিনি ঠিকভাবে জানতেনও না, এই গাছে কেমন ফল হবে। প্রথম বছর কিছু ফল আসে। সেই ফল খুব সুস্বাদু হওয়ায় তাতে কলম বাঁধেন। পরে দুই বিঘা জমিতে ওই চারা লাগালে দ্বিতীয় বছর গাছে ফল ভরে গেছে। প্রথম বছর তার ফল বিক্রি হয়েছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। তবে এ বছর বাগানের ফল ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি। এতে ওহিদুজ্জামান আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুলতানারা পারভীন সুমি বলেন, পানবুড়ি গ্রামে উদ্যোক্তা চাষি ওহিদুজ্জামান দুই বিঘা জমিতে কমলা চাষ করে লাভবান হয়েছেন। গত বছরে তার খরচ হয়েছিল ৫ হাজার টাকা, লাভ হয়েছিল ২ লাখ টাকা। এ বছর তিনি ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন। আমরা কৃষি বিভাগ এই উদ্যোক্তা চাষির পাশে সব সময় থাকি। তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকি। এ বাগানে সপ্তাহে অন্তত এক দিন পরিদর্শন করি। বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকনাশক স্প্রে করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। তিনি এ কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করার কারণে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
কমলা ক্ষেতের শ্রমিক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি ওহিদুজ্জামানের এ বাগানে অনেক দিন যাবত কাজ করছি। তিনি আমাকে যে টাকা দেন তা দিয়ে আমার সংসার চলে। গত বছরের চেয়ে এবার অনেক ফল বেশি হয়েছে। অনেক লোকজন আসছে এ বাগান দেখতে।
দর্শনার্থী আকবার আলী বলেন, বাগানের পাশেই আমার বাসা। আমি আসছি ওহিদ ভাইয়ের বাগান দেখতে। ফলগুলো সুন্দর এবং দামও ভালো। কিছু চারা নিয়ে আমার জমিতে লাগাবো তাই পরামর্শ নিতে তার কাছে এসেছি।
আরেক দর্শনার্থী ডা. মাসুদ রানা বলেন, আমি সাতক্ষীরা থেকে এসেছি জিসান নার্সারিতে ওহিদ ভাইয়ের বাগানটা দেখার জন্য। এই বাগানের কমলা লেবু অনেক সুন্দর ও রসালো। আমার নিজস্ব যে পরিত্যক্ত জমি আছে সেখানে এ ধরনের একটি বাগান করতে চাচ্ছি। ভাইয়ের কাছে পরামর্শ নিচ্ছি কীভাবে এমন বাগান করা যায়।
তরুণ উদ্যোক্তা হিরন আহমেদ বলেন, ওহিদ ভাইয়ের কমলা বাগান দেখে খুব ভালো লাগছে এবং একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমি চাচ্ছি নিজেই আমার জমিতে এমন একটি সুসজ্জিত বাগান তৈরি করতে। তাই ওহিদ ভাইয়ের বাগান দেখতে এসেছি।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, যশোরের শার্শা উপজেলায় এ বছর পাঁচ হেক্টর জমিতে কমলার চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে শার্শা উপজেলার পানবুড়িয়া গ্রামের ওহিদুজ্জামান দুই বিঘা জমিতে রামরঙ্গন কমলার চাষ করেছেন। এই এলাকার আবহাওয়া ও মাটি ভালো হওয়ায় বিভিন্ন দেশি-বিদেশি জাতের ফল চাষের জন্য উপযোগী। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকলে চাষিরা ভালো ফলন পাবেন। আগামী বছর কমলার আবাদ আরও বাড়বে। বাণিজ্যিকভাবে এই এলাকায় আবাদ করা গেলে উৎপাদিত কমলা বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
এএমকে