শেখ হাসিনা না পালালে তার হাড্ডি মাংস পাওয়া যেত না : মান্না
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা, কারণ তার পালানোর পথ ছাড়া কিছুই ছিল না। উনি যদি না পালাতেন তাহলে তার হাড্ডি মাংস পাওয়া যেত না বাংলাদেশে। যারা বলে শেখ হাসিনা আবার দেশে ফিরে আসবেন, আমি তো বলি পারলে আসেন। সেদিন একটি চ্যানেলে দেখলাম উনি টুপ করে ঢুকে পড়বেন, তার আগে বলেছিলেন টুস করে ফেলে দেবেন। পারবেন না। বিদেশের মাটিতে পৃথিবীর কেউ তাকে জায়গা দেয়নি। সবাই তাকে জানে সে একটা লুটেরা, খুনি, ফ্যাসিস্ট এবং তার দল বাংলাদেশের গণতন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছে।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে খুলনার উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্যের খুলনা মহানগর ও জেলার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে আমাদেরকে গঠন করতে হয়েছে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জনগণ ড. ইউনূসের সরকারকে সমর্থন করেছিল, এখনো সমর্থন করে। আমরা যে কোনো নির্বাচিত সরকারের কাছে একটি ভালো দেশ চাই, বাঁচতে চাই, জনগণের জন্য কল্যাণ করে সেই রকম দেশ চাই। আমরা একটা সরকার চাই যে সরকার কল্যাণকর রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা করবে। আমরা সেটা এই সরকারের (অন্তর্বর্তীকালীন) কাছে প্রত্যাশা করছি না। এই সরকার এতগুলো কাজ একসাথে করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, জনগণ ভোট দিতে পারেনি। ভোট ধ্বংস করেছেন শেখ হাসিনা। ভোট ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করেছেন। মানুষের অধিকার নষ্ট করেছেন। মানুষ ভোট দিতে গিয়ে দেখেছে ভোট আগেই হয়ে গেছে। মানুষ ভোট দিতে গিয়ে দেখেছে পুলিশ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে, সে তাকে ভোট দিতে দেয়নি। মানুষ দিনের ভোট দেখেছে আগের রাতে শেষ হয়ে গেছে। এই ডাকাতরা আমাদের দেশের সমস্ত অর্জন নস্যাৎ করে দিয়েছে। আমরা বলেছি ভোট দিতে। ভোট হবে এমন যেই ভোট মানুষ ইচ্ছামতো দিতে পারবে। ওই ভোট গণনা হবে, সেই গণনার পরে যেই রেজাল্ট পাওয়া যাবে, সেই রেজাল্ট অনুযায়ী জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। মানুষের ইচ্ছার ভিত্তিতে সরকার গঠিত হবে। সেই রকম সরকার যদি হয়, সেই সরকারের কাছে আমরা কতগুলো নিয়ম বেঁধে দেব। সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এটা বিজয়ের মাস। এই বিজয় এখন বিভিন্নভাবে মহিমান্বিত। সেই স্বাধীনতার পর আগস্ট এবং জুলাই মাস বাংলাদেশের ইতিহাসে কেবল না পৃথিবীর ইতিহাসে এক অন্যন্য আন্দোলন হয়েছে, অভ্যুত্থান হয়েছে। প্রায় অসম্ভব বলে বিবেচিত শেখ হাসিনার নৃশংস ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করা গেছে। সেই আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছেন, সেই আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছেন ২০ দিনে দেড় হাজার, আর ১৫ বছরের ৩ হাজারেরও বেশি সঠিক কেউ বলতে পারে না। তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। এই শহীদরা যে জীবন দিয়েছিলেন, এদের সবার লক্ষ্য ছিল একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার। নতুন বাংলাদেশ কি রকম? ওই পুরোনো বাংলাদেশের কথা ভাবেন, সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা সোনার বাংলা।
তিনি বলেন, যারা এই দেশটা গড়বে তারা দেশ গড়ার চাইতে নিজেদের গড়বার চিন্তা করেছে বেশি। তারা জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে নিজের কল্যাণ নিজের পরিবারের কল্যাণ তারা দলবাজি করতে চেয়েছে। গত ১৫ বছরের ইতিহাস প্রত্যেকের মনে আছে। শেখ হাসিনা বলতেন উন্নয়নের রাজনীতি চাই। আমি বাংলাদেশকে যে উন্নয়ন দিয়েছি, সেই উন্নয়ন আর কেউ দিতে পারিনি। আমি বাংলাদেশকে নতুন পথের সন্ধান দিয়েছি। আওয়ামী লীগের রাজনীতি কি উন্নয়নের রাজনীতি। সেই উন্নয়নের নামে মাত্র ছয় কিলোমিটারের পদ্মা সেতু করেছে অন্তত ৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে। আর আমাদের পাশের দেশে রয়েছে ভূপেন হাজারিকা সেতু। নদীর দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৯.১৫ কিলোমিটার, সেটি তারা করেছে ১১৮৬ কোটি ভারতীয় মুদ্রা দিয়ে (রুপি)। বাকি টাকা লুট করেছে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বলেছিল পদ্মা সেতু হলে দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা বদলে যাবে। বদলেছে চেহারা? পদ্মা সেতু হওয়ার পরে বেনজীরের চেহারা বদলেছে, সে অনেকগুলো জমি দখল করেছে। সে রিসোর্ট তৈরি করেছে, চোর-ডাকাত সবগুলো একসাথে মিলে জনগণের সব লুটেছে। কিন্তু মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। শাসক যদি এমন হতো যে সত্যি সত্যি জনগণের কল্যাণ করতে চায়, তাহলে তার পক্ষে কল্যাণ করা সম্ভব হতো।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম যেমন ইচ্ছা তেমন বাড়ছে। এইটা কমান, মানুষ যাতে ভালো থাকতে পারে।
জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, গুণগত পরিবর্তন করতে চাইলে, নিজেদের ভাগ্য বদলাতে চাইলে সেরকম মানুষ ও দল দেখে ভোট দেওয়া শেখেন। এখন থেকে চর্চা করেন। যদি মানুষ না পান, তাহলে নতুন মানুষ খুঁজে বের করেন। যদি দল না পান নতুন দল খুঁজে বের করেন।
ভারত সম্পর্কে সতর্ক থাকার কথা উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যে বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করছি সেই বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে তারাও বাধা হতে পারে। আমি আহ্বান করব তাদের কাছে ওইসব ধানায়-পানায় বাদ দেন, ওটা পারবেন না। বাংলাদেশকে সমান তালে বন্ধুর মতো করে সাথে নিয়ে চলতে পারবেন, না হলে পারবেন না, আপনারা হোঁচট খাবেন।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন দলের নগর শাখার আহ্বায়ক ও নব-নিযুক্ত জিপি অ্যাডভোকেট ড. মো. জাকির হোসেন। প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার। বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক এস এম মহিদুজ্জামান।
বক্তব্য দেন জেলা আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মজিদ হাওলাদার, নগর শাখার সদস্য কাজী আমিনুর রহমান, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. তরিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াসিন ইসলাম শুভ প্রমুখ।
সম্মেলনের শেষ পর্বে জেলা ও মহানগরীর নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দের নাম ঘোষণা করা হয়। পরে মাহমুদুর রহমান মান্না বসুপাড়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ শেখ সাকিব রায়হানের কবর জিয়ারত করেন।
মোহাম্মদ মিলন/আরএআর