ভারতের মিডিয়া এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লেগে গেছে
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি বলেছেন, ভারতের মিডিয়া এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লেগে গেছে। আর পশ্চিমাদের বোঝাতে চাইছে এখানে কোনো সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ নিরাপদে নেই। এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে আমাদের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গণসংহতি আন্দোলনের আয়োজনে গণসংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ফ্যাসিস্টদের শক্তি খুব একটা বেশি না। ভারতের শক্তিতে শক্তিশালী হয়ে এখন তারা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আওয়ামী লীগ এখন হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করে সেই ছবি পশ্চিমা বিশ্বে বিক্রি করতে চায়। এ ষড়যন্ত্র আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলা গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক আমজাদ হোসেন। সদস্য সচিব লিটন হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দীন পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক রায়, কালিয়াকৈর উপজেলার আহ্বায়ক মো. আশরাফুল ইসলাম খোকন প্রমুখ।
আরও পড়ুন
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের নেতাকর্মী, সদস্য, শিক্ষক-ছাত্র ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।
জুনায়েদ সাকি বলেন, মুসলমানদের সংখ্যা বেশি, কাজেই তাদের দায়িত্বও বেশি। সব ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। তাদের কেউ যেন বঞ্চনার শিকার না হয়। বাংলাদেশে যদি একজন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কোনোভাবে অপমানিত হয়, আক্রান্ত হয় তাহলে এটা মুসলমানদের জন্য গর্বের ব্যাপার মোটেই না। কাজেই আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টরা নিজেরা ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চায়। আমরা তাদের পরিষ্কারভাবে বলি এ দেশের ছাত্র-জনতাকে, আমাদের সন্তানদেরকে খুন করে পালিয়ে গিয়ে আপনারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। আপনাদের এ দেশের মাটিতে জায়গা হবে না।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী আরও বলেন, জুলাই-আগস্টে আমাদের ছাত্র-শ্রমিকরা আত্মত্যাগ করেছে একটা সশস্ত্র রাষ্ট্র শক্তির বিরুদ্ধে। যারা টিয়ারশেল, গ্যাস, লাঠিচার্জ, ছররা গুলি, সরাসরি মানুষ মরে সেই রকম গুলি তারা ছুড়েছে। সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেছে। দূর থেকে লক্ষ করে গুলি করে হত্যা করেছে। ১৬০০-র বেশি ছাত্র, শ্রমিক, তরুণ ও অভিভাবকরা প্রাণ দিয়েছেন। এটা বাংলাদেশের ১৯৭১ সাল ছাড়া আর কখনো ঘটেনি। এত বড় সংগ্রাম, এত বড় আত্মত্যাগ। কিন্তু এই আত্মত্যাগের পরেই মানুষ যে বাংলাদেশ চায় সেই বাংলাদেশ কি আমরা পাব? এই প্রশ্নটা আমাদের করতে হবে। মানুষ কি চেয়েছে সেটা কিন্তু এই ছাত্ররা বলেছে। অন্তর্বর্তী সরকার তারাও বলেছে।
জুনায়েদ সাকি বলেন, আমরা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চাই। যে বন্দোবস্ত শেখ হাসিনা বানিয়ে দিয়ে গেছে কিংবা ৫৩ বছর ধরে চলছে। এই যে একটা স্বৈরাচারী বন্দোবস্ত এটাকে একটি ফ্যাসিস্ট বন্দোবস্ত করেছে শেখ হাসিনা। সংবিধানকে এমনভাবে বানিয়েছে যে সংবিধান পকেটে ঢুকিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা যায়। তারপর রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো সব পকেটে ঢুকিয়েছে। আইনকানুন এমনভাবে বানিয়েছে, যাতে যা ইচ্ছা তাই করে ব্যবহার করা যায়। এভাবেই রাষ্ট্র বানিয়ে তারা সমস্ত বিরোধী দলের সদস্যদের অত্যাচার করেছে। লাখ লাখ মামলা দিয়েছে লাখ-কোটি কর্মীর বিরুদ্ধে। তারা গুম করেছে, খুন করেছে, বিনা বিচারে জেলে রেখেছে। এগুলো করেছে কারণ তারা যাতে সব লুটেপুটে খেতে পারে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের লক্ষ্য হচ্ছে তার নাগরিকদের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা, হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিষ্টান চাকমা কিংবা নারী পুরুষ যেই হোন না কেন নাগরিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করবে রাষ্ট্র। স্বাভাবিক ন্যায়বিচার, ধনী গরিব বৈষম্য, এই বৈষম্য এখানে থাকবে না। আপনি আদালতে গেলে ন্যায়বিচার পাবেন। তাহলে সাম্য মানবিক মর্যাদা সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষ ঐক্যবদ্ধ করেছিল। মানুষ আত্মত্যাগ করেছে প্রাণ দিয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, এ দেশের জনগণ সাম্য মানবিক মর্যাদা সামাজিক ন্যায়বিচার পায় না। কারণ জনগণের শক্তি নাই। জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি নাই। আজকেও আমরা যদি জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে না পারি তাহলে এই যে পুরোনো বন্দোবস্ত, ফ্যাসিস্ট বন্দোবস্ত, স্বৈরাচারী বন্দোবস্ত নানাভাবে আবার ফিরে আসবেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি লাগবে। যারা ক্ষমতায় গিয়ে লুটেপুটে খাবে না।
শিহাব খান/এসএসএইচ