‘জাতীয়করণের আগে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে’
জাতীয়করণের আগে নিয়োগ পাওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
তিনি বলেছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন ও শিক্ষকদের সাধারণ মানের উন্নয়ন হয়েছে। তবে জাতীয়করণের আগে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের মানের ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। আমাদের নিজস্ব কতগুলো ট্রেনিং প্রক্রিয়া চালু থাকে। একজন শিক্ষক নিজের উন্নয়নের জন্য উদ্যোগী হয়ে সেই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারে।
রোববার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুর আরডিআরএস প্রাঙ্গণে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর আয়োজিত ‘পঞ্চম ধাপের প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের মূল টার্গেট হলো একজন পঞ্চম শ্রেণি পাস করা শিক্ষার্থী যেন মাতৃভাষায় সহজভাবে লিখতে-পড়তে পারে, মাতৃভাষায় নিজের মনের কথা ছোট করে লিখতে পারে। সাধারণ হিসাব যোগ, বিয়োগ, গুন ও ভাগ যেন করতে পারে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমি নীলফামারীর বটতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রংপুরের তারাগঞ্জের বাছুরবান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। সেখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। স্কুলের অবকাঠামো ভালো, সুসজ্জিত, তবে উপস্থিতি শতভাগ নয়। শিক্ষকরা আছে, কিন্তু ছাত্রদের যা পারা উচিত ছিল সেটি তারা পারেনি। আমার কাছে এটি নতুন না। প্রতি বছর সারা দেশে যা জরিপ করা হয়, সেই জরিপের ফলাফলও এমনটাই।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে সমাজে নানা ধরনের মনোভাব রয়েছে। অনেকে মনে করে প্রাথমিকে বাচ্চাদের সবকিছু শিখে ফেলতে হবে। তবে আমি তা মনে করি না। দুনিয়ার অন্য শিক্ষাবিদরাও তা মনে করে না। প্রাথমিক স্কুলের লক্ষ্য হলে স্বাক্ষর করে তোলা। আমরা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোযোগ বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছি।
নতুন বছরে বই বিতরণ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, আমি আশা করছি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা জানুয়ারি মাসেই শতভাগ বই পাবে। তবে বিগত দিনের মতো উৎসব করে হয়ত দিতে পারব না। তবে বই ছাপানোর সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
প্রাথমিকে সিলেবাস পরিবর্তন নিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিকে তেমন পরিবর্তনের কিছু ছিল না। তবে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বইয়ে কিছুটা পরিবর্তন এনেছি। আমাদের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে বিভিন্ন গল্প আকারে, ছবি আকারে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রতিফলন থাকবে।
বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, আমাদের দেশে খুব ভালো ভালো প্রাথমিক স্কুল রয়েছে, যেখানে প্রতি বছর ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতা হয়। সেই সঙ্গে পিছিয়ে পড়া স্কুলও রয়েছে। আমরা চাই প্রতিটি স্কুলের মানের উন্নয়ন হোক। দেশের স্বল্প আয়ের মানুষ যেন কম খরচে তাদের সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারে। এজন্য উপবৃত্তি, শিক্ষার উপকরণ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। আমরা দুপুরের খাবার চালু করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এ সময় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল হাকিম, রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক আজিজুর রহমান, সহকারী পরিচালক নজরুল ইসলামসহ শিক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর আয়োজিত ‘পঞ্চম ধাপের প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ