‘ওই ছেলের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করতে মেয়েকে নিষেধ করেছিলাম, শুনতো না’
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে মহাসড়কের পাশ থেকে সাহিদা আক্তার নামে এক নারীর গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় শ্রীনগর থানায় মামলা করা হয়েছে। প্রেমের সম্পর্কের জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে রোববার (১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে মামলাটি করেন নিহতের মা জরিনা খাতুন। মামলায় নিহত সাহিদা আক্তারের প্রেমিক তৌহিদকে আসামি করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ মায়নাতদন্ত শেষে তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে সাহিদা আক্তারকে মুন্সীগঞ্জের মহাসড়কে অন্তত ৫ রাউন্ড গুলি করে হত্যা করা হয়। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার কোলাপাড়া ইউনিয়নের দোগাছী ফুটওভার ব্রিজের অদূরে ঢাকামুখী সার্ভিস লেন থেকে উপুর হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সকাল ৮টার দিকে স্থানীয়রা প্রথম মরদেহ দেখতে পান। পরে খবর পৌঁছায় পদ্মা সেতু উত্তর থানা ও সেতুর নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা পেট্রোল টিমের কাছে। তারা শ্রীনগর থানা পুলিশকে জানান।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, ভোরে ওই নারীকে পদ্মা সেতু উত্তর থানা সংলগ্ন খানবাড়ী সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকা থেকে দাড়িওয়ালা এক যুবকের সঙ্গে মহাসড়কের সার্ভিস লেনে হাঁটতে দেখা যায়। এর আগে সেখানে তর্কে জড়ান তারা। চড়-থাপ্পড় দিতে দেখা যায় ওই নারীকে। তবে গুলি করতে দেখেননি কেউ। বেলা পৌনে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহের ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বিকেলে নিহত নারীর সঙ্গে থাকা মোবাইলের সিমের সূত্র ধরে পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। পরে খবর পেয়ে ছুটে আসেন পরিবারের সদস্যরা।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিহত সাহিদা রাজধানী ঢাকার ওয়ারীতে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন ও নারিন্দা এলাকার বলধা গার্ডেন সংলগ্ন জনৈক কামাল মিয়ার বাড়িতে ডে-কেয়ারে কাজ করতেন। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বেগুনবাড়ী গ্রামের মৃত মো. মোতালেবের মেয়ে সাহিদা। তারা দুই ভাই ও তিন বোন। ৭-৮ বছর আগে সাহিদার বিয়ে হয়েছিল। পরে সেই সম্পর্ক টেকেনি।
নিহতের মা জরিনা খাতুন বলেন, তৌহিদ নামে এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করতো সাহিদা। তাদের মধ্যে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে প্রায়ই মারামারি হতো। এমনকি আমি নিজেও ওই যুবকের কাছে মারধরের শিকার হয়েছি বেশ কয়েকবার। একপর্যায়ে আমি প্রেমের বিষয়টি মেনেও নিই। কিন্তু ছেলের পরিবার মানতে চাইতো না। আমার কাছে ছেলের মা বিয়ে বাবদ ১০ লাখ টাকাও চায়। আমি বাসা-বাড়িতে কাজ করে খাই। ১০ লাখ টাকা কোথা থেকে দেব। কয়েক মাস আগে চাঁদপুরে গিয়ে আপত্তিকর অবস্থায় তৌহিদ-সাহিদা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। থানা থেকে আমাকে খবর দেওয়া হলে আমি রাগে-ক্ষোভে যাইনি। পরে ছেলের পরিবারের সদস্যরা গিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে দুইজনকে। তবে আমার ছেলেটাকে সুবিধার মনে হতো না- শুনেছি সে গাঁজার ব্যবসা করে। আমি ওই ছেলের সঙ্গে এভাবে যেখানে সেখানে ঘোরাঘুরি করতে মেয়েকে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু আমার কথা শুনতো না।
আরও পড়ুন
তিনি আরও বলেন, গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে সাহিদা আমাদের সঙ্গে বাসায়ই ছিল। এমন সময় ফোনে ডেকে নেওয়া হয় সাহিদাকে। পরে শনিবার দুপুরে আমার মেয়েকে গুলি করে হত্যার খবর পাই পুলিশের কাছ থেকে। আমি শুনেছিলাম ছেলের বাড়ি বিক্রমপুর। মনে হয় ওই ছেলেই আমার মেয়েকে এখানে নিয়ে এসে হত্যা করেছে।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আজাদ বলেন, একজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। প্রেমের সম্পর্কের জেড়ে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে মামলায় উল্লেখ করেছেন নিহতের মা জরিনা খাতুন।
শ্রীনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাহিদা আক্তারের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় শ্রীনগর থানায় মামলা হয়েছে। নিহতের মা বাদী হয়ে এই মামলা করেছেন। নিহতের মরদেহ তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মামলা রুজুর পর প্রধান আসামি তৌহিদকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। তবে এখননো তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। শিগগিরই তৌহিদকে আইনের আওতায় আনা। নিহত সাহিদা আক্তার রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় থাকতেন। অভিযুক্ত যুবক তৌহিদও একই এলাকার বাসিন্দা।
মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মোহাম্মদ ফিরোজ কবির জানান, নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ।
ব ম শামীম/আরএআর