জাতীয় ইস্যুতে জনগণের ইস্পাত কঠিন ঐক্য প্রয়োজন : জামায়াত আমির
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বিগত ১৫ বছর স্বৈরাচারী সরকার সারা দেশে খুন করেছে, গুম করেছে; জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছে। কোটি কোটি মানুষকে মামলার জালে বন্দি করেছে। ঘরে-বাইরে মানুষের শান্তি, নিরাপত্তা কেড়ে নিয়েছে। বাংলাদেশকে একটা বৃহৎ কারাগারে পরিণত করেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের জুলুমের হাত থেকে দেশবাসীকে মুক্তি দিয়েছে।
রোববার (১ ডিসেম্বর) সকালে খুলনার খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে স্থানীয় ইস্টার্ন জুট মিলস শ্রমিক ময়দানে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন জামায়াত আমির।
খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামীর আমির সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটোর সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদ মামুনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসাইন।
সম্মেলনে জামায়াতের আমির বলেন, বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান হলেও আমরা বিভিন্ন ধর্মের মানুষ মিলেমিশে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করি এবং শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান করি। আমাদের মধ্যে রয়েছে সাম্প্রদায়িক অভূতপূর্ব সম্পর্ক এবং সম্প্রীতি। এটিই আমাদের সৌন্দর্য। এটি এদেশের মানুষের গর্ব। এমন সুন্দর একটা বাংলাদেশকে এলোমেলো করে দিয়েছিল একটা পরিবার, একটা গোষ্ঠী, একটা দল। এরা পরিবারকে দেখেছে আগে, এরপর দেখেছে গোষ্ঠীকে, এরপর দেখেছে দলকে। তারপর জুলুম চালিয়ে দিয়েছে জনগণের ঘাড়ে। যারা ছিল হিংসুক, সংকীর্ণমনা। এরা ছিল বেদরদী, বেপরোয়া। এরা না আল্লাহকে ভয় করেছে, না মানুষকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করেছে। এরা মানুষকে মানুষ গণ্য করেনি। এরা মানুষের উপর তাণ্ডব চালিয়েছে। সেই জেল-জুলুম খুন এবং গুমের শিকার সারা বাংলাদেশের মানুষ।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, পালিয়ে যাওয়া পতিত স্বৈরাচার বলেছিল তারা ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলে দুই দিনের ভেতরে ৫ লাখ মানুষকে খুন করা হবে। আল্লাহর মেহেরবানীতে তার কিছুই হয়নি। আমরা ৫ তারিখে দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছিলাম শান্ত থাকুন, ধৈর্য ধরুন, প্রিয় দেশকে ভালোবাসুন। আলহামদুলিল্লাহ বাংলাদেশের কোথাও বড় কোনো অঘটন ঘটেনি। ছিটা-ফোঁটা যা ঘটেছে তার জন্যও আমরা লজ্জিত। একেবারে স্বল্প, ওটা না ঘটলে আরও ভালো হতো। দেশবাসী প্রমাণ করেছে আমরা এ দেশকে ভালোবাসি, এটা আমাদের দেশ।
তিনি আরও বলেন, সব জাতীয় ইস্যুতে জনগণের ইস্পাত কঠিন ঐক্য প্রয়োজন। এ দেশ কারও একার নয়, দেশ সবার। দেশ এখনও পনের বছরের জঞ্জালমুক্ত হয়নি। তাই সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাই। মর্যাদাশীল দেশ গড়ার কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরনির্ভরশীল নয়, কৃষি ও শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে দেশ গড়া প্রয়োজন। প্রভু নয়, বন্ধু প্রতিবেশী রাষ্ট্র চাই আমরা।
আমিরে জামায়াত বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের দুটি দেশপ্রেমিক সংস্থাকে ধংস করেছে। প্রথমে তারা বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এরপর জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিয়ে ও কারাগারে রেখে তিলে তিলে হত্যা করে। তাদের সেই অত্যাচার-নির্যাতনের জবাব এদেশের শান্তিকামী ছাত্র-জনতা জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দিয়েছে।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসররা এখনো দেশকে অস্থিতিশীল করতে উস্কানি দিচ্ছে। তবে সেই ফাঁদে কোনোভাবেই পা দেওয়া যাবে না। যতই ষড়যন্ত্র হোক তা ব্যর্থ করতে হবে। তিনি বলেন, দেশ এখনো জঞ্জাল ও স্বৈরাচারমুক্ত হয়নি। তাই জাতীয় প্রয়োজনে জনগণের ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, এ অঞ্চলের প্রধান দুটি সমস্যা হলো মিল ও বিল। আওয়ামী লীগ আমলে দুটিই ধ্বংস হয়েছে। একদিকে ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে শ্রমিকদের বেকার করা হয়েছে অপরদিকে বিল ডাকাতিয়াসহ বিভিন্ন জলাশয় দখল ও স্লুইচগেট বন্ধ করে হাজার হাজার মানুষকে পানিবন্দি করে রাখা হয়েছে। প্রশাসনের দুর্নীতির কারণে মিলগুলোর লোকসান হলেও তার দায়ভার চাপানো হয়েছে শ্রমিকদের ওপর।
ডুমুরিয়া-ফুলতলা সন্ত্রাস কবলিত এলাকা ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাঁচ বছরের জন্য তাকে এমপি নির্বাচিত করার পর সাধ্য অনুযায়ী সন্ত্রাসমুক্ত করা হয়েছে। আবার জনগণ তার ওপর দায়িত্ব দিলে প্রধান প্রধান সমস্যাগুলোর দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
জামায়াতের জাতীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন বলেন, ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর জামায়াতে ইসলামীর আমির দেশবাসীকে যে স্বপ্ন দেখান জামায়াতের প্রতিটি কর্মীকেই সেই বার্তা নিয়ে দেশবাসীকে মুক্তির পথ দেখাতে হবে। জনগণকে বন্ধু হিসেবে মনে করে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিবর্তনে জামায়াতের জনশক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে হবে।
সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হোসাইন, খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, নড়াইল জেলা আমীর অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান বাচ্চু, জেলা নায়েবে আমির মাওলানা গোলাম সরোয়ার ও অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, মহানগরী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, জেলা সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, প্রিন্সিপাল গাওসুল আযম হাদী, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও আজিজুল ইসলাম ফারাজী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসাইন, দিঘলিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা আবুল হাসান, অভয়নগর উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা মহিউল ইসলাম, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ আমিনুল ইসলাম, শেখ সিরাজুল ইসলাম, খুলনা জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি বেলাল হোসাইন রিয়াদ, ফুলতলা উপজেলা আমীর আব্দুল আলিম মোল্লা, আব্দুল্লাহ আল ইমরান, শিরমনি আমির মাওলানা এমদাদুল্লাহ মাশরুর, গিলাতলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা গোলাম মোস্তফা, মশিয়ালী আমীর মো. জাকারিয়া শেখ, হাফেজ আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।
এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের উদ্যোগে নগরীর আল ফারুক সোসাইটিতে মহিলা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি শামসুন নাহারের সভাপতিত্বে সেখানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। সমাবেশে স্বাগত বক্তৃতা করেন মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল।
এ সময় খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট শাহ আলম ও প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন।
মোহাম্মদ মিলন/আরকে