ব্রিজের ওপর ২০ দোকান, মাসে ইজারাদারের পকেটে ৬২ হাজার টাকা
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারী বাজারে ব্যস্ততম সড়কে সরকারি খালের ওপর ব্রিজের দুইপাশ দখল করে অবৈধভাবে অন্তত ২০টি দোকান বসিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এসব দোকান থেকে বছরে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা খাজনা তুলছেন ইজারাদার।
তবে সদর উপজেলা প্রশাসন বলছে, মানবিক কারণে ব্রিজের ওপরের দোকানিদের উঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এই সুযোগে ইজারাদার তার পকেট ভারি করছেন।
মান্দারী বাজার কমিটির সভাপতি, ইজারাদার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সামছুদ্দিন সাজু প্রতিদিন ৭০ টাকা ও সপ্তাহে দুই হাটবারে ২০০ টাকা করে দোকানিদের কাছ থেকে আদায় করেন। এভাবে প্রতিমাসে ৬২ হাজার দুইশত টাকা খাজনা দেন দোকানিরা। এতে বছরে ইজারাদার এসব দোকান থেকে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা খাজনা আদায় করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রহিম, জয়নাল আবেদিন ও আবুল কাশেমসহ কয়েকজন জানান, বাজারের রাস্তাগুলো তেমন চওড়া নয়। এতে সবগুলো গলিতেই যানজট লেগে থাকে। এর মধ্যে ব্রিজটিও অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। সেখান দিয়ে হাটাচলাও খুব কষ্টের। ব্রিজটির কারণেই যানজট তীব্র আকার ধারণ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মান্দারী ও দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪ জন মেম্বার জানান, সদর উপজেলার মধ্য বাজারে সরকারি খালের ওপর ব্রিজটির অবস্থান। এটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্মিত। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ব্রিজের দুইপাশ দখল করে ব্যবসা করে আসছে ব্যবসায়ীরা। দোকানের ভিড়ে ব্রিজটি অস্তিত্ব বোঝা যায় না। ব্রিজ আছে কি না, তাও বলা মুশকিল। এ ব্রিজটি দিয়ে দত্তপাড়া ইউনিয়ন, মান্দারীবহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাসহ কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে। হাটাচলাতেই ভোগান্তিতে পড়তে জনসাধারণকে। কোনো রিকশা বা ছোট পিকআপ ভ্যান প্রবেশ করলেই যানজট লেগে চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। চলাচলে স্বাভাবিক পরিস্থিতির জন্য ব্রিজের ওপর থেকে দোকানগুলো সরিয়ে ফেলা উচিত। এছাড়া প্রশাসন মানবিকভাবে চিন্তা করলেও, ইজারাদার ঠিকই তার পকেট ভারি করছে। অবৈধভাবেই দোকানিদের কাছ থেকে বছরে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ইজারাদার। যানজট নিরসনে একাধিকবার প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। ব্যবস্থা না নেওয়ায় মানুষের মাঝে দিন দিন ক্ষোভও বাড়ছে।
ব্রিজের উপর থাকা দোকানিরা বলেন, চলতি বছর মান্দারী বাজারের ইজারা নিয়েছে বাজার কমিটি। প্রতি হাটবারে বাজার ইজারাদার প্রতি দোকান থেকে দুইশত টাকা এবং অন্যান্য দিনে ৭০ টাকা করে খাজনা আদায় করে। সে হিসেবে প্রতিমাসে একটি দোকান থেকে ইজারাদার আদায় করে ৩ হাজার ১৪০ টাকা। আর ব্রিজের উপর থাকা ২০টি দোকান থেকে আদায় করছে মাসে ৬২ হাজার ২০০ টাকা। এভাবে সরকারি ব্রিজ ভাড়া দিয়ে বছরে সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি আদায় করা হচ্ছে।
নাম না প্রকাশে একজন ব্যবসায়ী বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ব্রিজের ওপর বসে ব্যবসা করছি। প্রতি হাটবারে ২০০ ও অন্যান্য দিন ৭০ টাকা করে ইজারাদারকে খাজনা দিতে হয়। একটাকাও কম নেয় না।
সামছুদ্দিন সাজু এ ঘটনায় কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অভি দাস বলেন, মানবিক কারণে ব্রিজের ওপর বসানো দোকানগুলো সরানো হচ্ছে না। বিকল্প ব্যবস্থা করতে না পারায় তাদেরকে সরানো যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।
হাসান মাহমুদ শাকিল/আরকে