মাদরাসার কক্ষে মিলল শিক্ষার্থীর মরদেহ, শিক্ষকসহ আটক ২
রংপুর মহানগরীর একটি মাদরাসার নির্মাণাধীন ভবনের কক্ষ থেকে সিয়াম ইসলাম (১০) নামের এক শিশুশিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় এক শিক্ষকসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের পরিবারের দাবি, শিশু সিয়ামকে বলাৎকারের পর হত্যা করা হয়েছে। এ অভিযোগে শিশুটির বাবা ভুট্টু মিয়া একটি মামলা দায়ের করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে মরদেহ উদ্ধারের এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সিয়াম ইসলাম রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালারহাট ইউনিয়নের বুজরুক গ্রামের কাঠমিস্ত্রি মনোয়ার হোসেন ভুট্টুর ছেলে। সে রংপুর নগরীর গনেশপুর এলাকার বকুলতলা জান্নাতবাগ মাদরাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের নাজেরা শাখার শিশুশিক্ষার্থী ছিল। মৃত্যুর ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড কি না তা তদন্ত করছে সিআইডি ও রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
মাদরাসা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের পর ক্লাস শুরুর পর সিয়ামকে দেখতে না পেয়ে সবাই মিলে তাকে খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে আব্দুর রহমান আবদুল্লাহ নামের এক শিক্ষক সিয়ামকে মাদরাসার সদ্য নির্মিত তৃতীয় তলার একটি কক্ষে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। পরে তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সিয়ামের চাচা আনোয়ার হোসেন বলেন, মাদরাসা থেকে কল দিয়ে জানানো হয় সিয়াম অসুস্থ। মাদরাসায় গিয়ে শুনি ভাতিজা মারা গেছে। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। সিয়াম আমাদের আদরের সন্তান। দুই ভাইয়ের মধ্যে সিয়ামই বড়।
নিহত সিয়ামের বাবা ভুট্টু মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে সিয়ামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছিল। সে আজ শুক্রবার সকালে বাড়িতে ছুটি নিয়ে ফিরবে বলে জানিয়েছিল। তার মা ছেলের জন্য মাংস কিনে রেখেছিলেন। অথচ এখন সে বাড়ির পরিবর্তে হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
মাত্র তিন সপ্তাহ আগে সিয়ামকে ওই মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে ভর্তি করানো হয় বলে জানান তার বাবা। হঠাৎ এমন মৃত্যুর ঘটনায় তিনি অভিযোগ করে জানান, তার ছেলেকে বলাৎকারের পর হত্যা করা হয়েছে। শরীরে আঘাত-নির্যাতনের কিছু চিহ্ন আছে, এ ছাড়া ঘাড় মটকে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন তিনি।
ওই মাদরাসার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, এমন ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারসহ শাস্তি দাবি করছি।
কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ হালিম মিয়া বলেন, প্রাথমিক তদন্তে শিশুটির শরীরে বলৎকার ও শ্বাসরোধে হত্যা হয়েছে, এমন কিছু আলামত পাওয়া গেছে। ব্যবহৃত পায়জামাতেও এর কিছু নমুনা রয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত ছাড়া এখন প্রকৃত ঘটনাটি বলা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, ঘটনার পরপরই সন্দেহভাজন হিসেবে মাদরাসাশিক্ষক আব্দুর রহমান আবদুল্লাহ ও মাদরাসাছাত্র মোখলেছুর রহমানকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। খুব শিগগিরই প্রকৃত ঘটনার সত্যতা উন্মোচন হবে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা একটি মামলা করেছেন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ