ঠাকুরগাঁওয়ের জয়নালের বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে ‘দার্জিলিং’ কমলা
ঠাকুরগাঁওয়ে কমলা বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে দার্জিলিং জাতের হলুদ কমলা। এই দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে হাজারো দর্শনার্থী। আর দর্শনার্থীদের জন্য সুব্যবস্থা করে রেখেছেন বাগানের মালিক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদিন।
বাগানের প্রতিটি গাছে প্রচুর পরিমাণে কমলা থোকায় থোকায় ঝুলছে। ভারতীয় জাতের এ ফল মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে চাহিদাও রয়েছে। এছাড়া বাগানেই বিক্রয় হচ্ছে দার্জিলিং জাতের কমলা।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের টাঙ্গন ব্রিজ এলাকায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নে ৬ বিঘা মাটিতে সবুজ মাল্টা, চায়না ও দার্জিলিং জাতের কমলার বাগান দিয়েছেন জয়নাল আবেদিন। ৪ বছর আগে চাকরি থেকে অবসরের পর কৃষি উদ্যোক্তা জয়নাল আবেদীন এই বাগান গড়ে তোলেন।
উৎপাদিত বাগানের এসব ফল স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে পাঠানো হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্রতি বছর বাগানের পরিধি বাড়ায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে অনেকের। বাগানের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলা। নভেম্বর মাস থেকে বাগানের উৎপাদিত কমলা বিক্রি করতে শুরু করেছে বাগান মালিক। এ বছর ৮ লক্ষাধিক টাকার ফল বিক্রি করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
বর্তমানে ৩ একর জমিতে তিন শতাধিক গাছের এই বাগানের প্রতিটি গাছে ৮ থেকে ৯শ কমলা ধরেছে। চলছে ফল বিক্রির কার্যক্রম। উৎপাদিত কমলা বাগানেই ক্রয় করছেন দর্শনার্থীরা। একই প্লটে দর্শনার্থীদের জন্য উৎপাদন করা হয়েছে চারা। বাগান দেখতে এলে তার পাশে চারাও ক্রয় করতে পারবে।
বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থী হৃদয় ইসলাম বলেন, শহর থেকে এসেছি কমলা বাগান দেখতে। আমি দার্জেলিংয়ের বাগান দেখেছি। কিন্তু এখানে কমলা বাগান এত সুন্দর যে দার্জিলিংয়ের বাগানকেও হার মানাবে। আর এই কমলা অনেক মিষ্টি। আমার দেশের মাটি সোনার চেয়েও খাটি তা এই বাগান দেখলেই বোঝা যায়।
আরেক দর্শনার্থী মিলন ইসলাম বলেন, পরিবারসহ কমলা বাগান দেখতে এসেছি। আগে কমলা বাগান শুধু ছবিতেই দেখেছি, আজ বাস্তবে গাছে ঝুলন্ত কমলা দেখলাম। আর পুরো বাগানে কমলা ঝুলে আছে। কমলা ক্রয় করে খেলাম অনেক মিষ্টি ও রসালো কমলা। এই কমলা খেয়ে মনে হলো না যে আমার দেশের মাটিতে উৎপাদিত কমলা খাচ্ছি।
আব্দুর রহমান বাগান দেখতে এসে বলেন, আমার বাগানেও কমলা গাছ রয়েছে। তবে এই বাগান খুব সুন্দর করে যত্ন করার কারণে ফলন অনেক ভালো হয়েছে। এছাড়া ফলের সাইজ ও রং একবারে ঠিকঠাক হয়েছে। আমি বাগান জয়নাল ভাইয়ের সঙ্গে আমার বাগান নিয়ে আলোচনা করতে এসেছি।
কমলা বাগানে প্রথম থেকেই কাজ শফিকুল। তিনি বলেন, আমি বাগানে প্রথম থেকেই কাজ করছি। এখন প্রতিদিন প্রায় এক হাজারের ওপর মানুষ আসে এই বাগান দেখতে। আমরা বাগানে ৮/১০ জন এখন কাজ করতেছি। কমলা গাছ থেকে পারার জন্য ৩/৪ জনকে কাজ করতে হয়। এছাড়া বাগান পাহারা দিতে হয়। না হলে ফল চুরির ভয় থাকে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ঠাকুরগাঁও জেলায় ৮৬০ জন কৃষক কমলা ও মাল্টা চাষে জড়িত রয়েছে। ইতিমধ্যে জেলায় ১ হাজার মাল্টা ও ৬০টি কমলার বাগান গড়ে উঠেছে।
জয়নাল আবেদিন বলেন, চাকরির পাশাপাশি একটা বাগানের স্বপ্ন ছিল। এক বন্ধুর পরামর্শে কমলা ও মাল্টার বাগান দেই। প্রথম বছর প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার কমলা বিক্রি করেছি। দ্বিতীয় বছর ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছি। প্রতিদিন শত শত মানুষ আমার বাগান দেখতে আসছে। আর্থিকভাবে বাড়তি মুনাফার পাশাপাশি মানুষের সাড়া পেয়ে বেশ ভালো লাগছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের জমি সমতল এবং উর্বর। এখানে যেকোনো ধরনের ফসল ব্যাপক উৎপাদন হয়। অন্যান্য জেলা থেকে ঠাকুরগাঁও জেলায় শীত অনেক বেশি থাকে এবং মাটি অম্লীয় হওয়ায় এখানে কমলা চাষে নীরব বিপ্লব ঘটেছে।
আরিফ হাসান/আরকে