ব্রিজের শেষ মাথায় বাড়ির উঠান!
নিয়ম অনুযায়ী সংযোগ সড়কের ব্যবস্থা করেই ব্রিজ নির্মাণ করতে হয়। তবে স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবির মুখে মাগুরা পৌরসভার ইসলামপুর পাড়া নবগঙ্গা নদীর খেয়াঘাটে ২ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছে ৪০ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ। কিন্তু নির্মাণ করা হয়নি দুপাশের সংযোগ সড়ক।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর মাগুরা পৌর শহরের নবগঙ্গা নদীর খেয়াঘাটে মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর ব্রিজটি উদ্বোধন করেন।
ফিতা কেটে উপস্থিত স্থানীয়দের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা ব্রিজ চেয়েছেন, ব্রিজ করে দিলাম। ভবিষ্যতে জায়গা অধিগ্রহণ করতে পারলে রাস্তা করে দেব’।
এরই মধ্যে কেটে গেছে এক বছর। কিন্তু সেখানে এখনো সংযোগ সড়ক তৈরি করতে পারেনি পৌরসভা। ব্রিজের একটি অংশ পড়েছে একজনের বাড়ির উঠানে। সেখানে নামার রাস্তা নেই। স্থানীয়রা লাঠি, বাঁশ, বালুর বস্তা দিয়ে কোনোমতে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন।
উঁচু জায়গা পারি দিয়ে সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে বয়স্কদের। সেখান দিয়েই সবাই ওঠানামা করেন। ব্রিজের বিপরীত পাশের চিত্র অনেকটা একই রকম।
জানা গেছে, ২ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ করে মাগুরা পৌরসভার ইসলাম পাড়াসংলগ্ন নবগঙ্গা নদীর খেয়াঘাটে ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি গার্ডার ব্রিজটি গত বছর উদ্বোধন করা হয়। খেয়াঘাটের একপাশে রয়েছে পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের পারনান্দুয়ালী চরপাড়া এবং অন্যপাশে ইসলামপাড়া এলাকা। কিন্তু দুপাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় এ পথ দিয়ে যাতায়াত করতে স্থানীয়দের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মাগুরা পৌরসভা ব্রিজটি নির্মাণ করে। রাস্তার জন্য জায়গা না দেওয়াতে ভোগান্তির শেষ নেই এলাকাবাসীর।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. মাহবুবুল আলম বলেন, ব্রিজের দুপাশে সরকারি খাস জায়গা। কিন্তু কেউ জায়গা ছাড়তে চাচ্ছে না। ব্রিজের কাজ যখন শুরু হয় তখন সরকার কেন উদ্যোগ নিলো না। এ সংযোগ সড়ক না থাকার কারণে পৌরসভার ৬,৭ ও ৯ নং ওয়ার্ডবাসীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পারনান্দুয়ালী চর পাড়া দারুস সালাম জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মোতাসিম বিল্লাহ বলেন, আমরা মসজিদের কিছু অংশ ভেঙে ব্রিজের সড়কের জন্য দিয়েছিলাম। ব্রিজ নির্মাণের পর পরিপূর্ণভাবে দুপাশে সংযোগ সড়ক না হওয়ার কারণে দুপাড়ের মুসল্লিদের যাতায়াতের খুব সমস্যা হচ্ছে। চলাচল করতে গিয়ে অনেক বাচ্চারা, বয়স্ক ব্যক্তিরা পড়ে যাচ্ছেন। দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। মসজিদের মুসল্লিদের পক্ষ থেকে ব্রিজের দুপাশে সংযোগ সড়ক করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় বাসিন্দা মফিজ রহমান বলেন, ব্রিজের দুপাশে সংযোগ সড়ক ছাড়াই এমপি সাইফুজ্জামান শিখর ব্রিজ উদ্বোধন করে দিয়ে যান। সড়ক না থাকায় প্রতিনিয়ত ব্রিজে চলাচল করতে গিয়ে অনেকের হাত-পা ভাঙছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ব্রিজের একপাশে পারনান্দুয়ালী চরপাড়া এলাকার অধিকাংশ মানুষ ব্যবসাসহ নানা পেশার সঙ্গে জড়িত। এ এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী শহরে যাতায়াত করেন। কিন্তু ব্রিজের দুই পাশে গর্ত থাকায় তারা গত এক বছর ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। বিশেষ করে যারা শহরে ব্যবসা করেন তারা রাতে বাড়ি ফেরার পথে আলোর অভাবে বেশি দুর্ভোগ পোহান। প্রায়ই তাদের দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। স্থানীয়রা দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সংকটের সমাধান চেয়েছেন।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন বলেন, নবগঙ্গা নদীর ওপরে ব্রিজটি পৌরসভা থেকে নির্মাণ করা হয়েছে। এই জায়গাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাভুক্ত না। তবে ব্রিজ নির্মাণের ক্ষেত্রে সংযোগ সড়কের দিকে খেয়াল রাখা উচিত ছিল। আমাদের অধিগ্রহণকৃত জমি ওখানে নেই তবে নদীর পাশের জায়গাগুলো খাস খতিয়ানভুক্ত। সেখানে রাস্তা নির্মাণ করতে কোনো বাধা আছে কি না সে বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারের বাইরে।
মাগুরা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান বারী বলেন, নদীর দুপাশে মানুষের চলাচলের সরকারি জায়গা থাকায় ব্রিজ বানানোর সময় জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন পড়েনি। এখন ব্রিজের উওর-দক্ষিণ পাশের কিছু স্থানীয় লোকজন সরকারি জমিকে তাদের জমি বলে দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করেছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য এরই মধ্যে এলাকাবাসীর সঙ্গে একাধিকবার আলাপ করা হয়েছে। তারা বলেছেন, ডিসেম্বরে বিষয়টি সমাধান করবেন। সমাধান হলে ব্রিজের দুপাশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে।
ব্রিজের উত্তর পাশের শেষ মাথায় পারনান্দুয়ালী চরপাড়ার বাসিন্দা এরশাদ আলী খানের বাড়ি। তিনি বলেন, ব্রিজের জন্য এরই মধ্যে আমার তিনতলা ফাউন্ডেশনের একটি বাড়ি ভাঙতে হয়েছে। টিনশেডের একতলা একটি বাড়িতে এখন আমার পরিবারের চারজন সদস্য থাকি। এখন এই বাড়িটিও ভাঙতে বলছে। রাস্তা বা ব্রিজের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে জমি কিনতে দেখেছি। কিন্তু এলাকাবাসী আমার জমির দাম না দিয়েই ঘরটি ভাঙতে বলছে।
মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর গত ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তাছিন জামান/আরকে