মৃত ভেবে লাশের স্তূপে ফেলে রাখা হয়েছিল
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন গুলিবিদ্ধ আন্দোলনকর্মী মেহেরাজ উদ্দিন শ্রাবণ। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট গণভবনের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে পুলিশ আমাদের ওপর গুলি করে। আমি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে যাই। হঠাৎ জ্ঞান ফিরে দেখি অনেকগুলো লাশের ওপর পড়ে আছি। মৃত ভেবে আমাকে লাশের স্তূপে ফেলে রাখা হয়েছিল।
সোমবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠিত এক স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
মেহেরাজ উদ্দিন শ্রাবণ বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকে গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত রাজপথে সক্রিয় ছিলাম। এতে দেখেছি পতিত সরকার ও প্রশাসনের কঠোর বর্বরতা। বিগত ৫ আগস্ট গণভবনের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে পুলিশ আমাদের ওপর গুলি করে। এতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন নিহত হন। তখন আমি গুলিবিদ্ধ হয়ে অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে যাই। এরপর হঠাৎ জ্ঞান ফিরে দেখি আমি লাশের স্তূপের ওপর পড়ে আছি। তখন আমি চিৎকার করলে দুইজন পুলিশ এসে তালা খুলে আমাকে লাশ ঘর থেকে বের করে আটকে রাখে। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ পুলিশ ও আনসার সদস্যরা পালাতে শুরু করে আমাকে পুলিশ তাদের পেছনের দরজা দিয়ে বের করে দেয়। সেখান থেকে আন্দোলনকারীরা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
শ্রাবণ আরও বলেন, আন্দোলনে আমি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলাম। এখনো আমার চোখে দুইটি প্লেইট লাগানো আছে, চিকিৎসা চলছে। আমার বা পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নেই, এক্ষেত্রে আমি সরকার এবং প্রশাসনের সহযোগিতা চাই। সেইসঙ্গে আমি আশা করব শহীদদের পাশাপাশি আমার মতো যারা আহত হয়েছে, তাদের প্রতি সরকার ও প্রশাসন সুদৃষ্টি রাখবে, এটাই আমার আশা।
স্মরণসভায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল হক প্রিন্সের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মুফিদুল আলম। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আজিজুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম, বিএনপি নেতা জাকির হোসেন বাবলু, অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, রোকনুজ্জামান সরকার, জামায়াত নেতা আ. করিম, ইসলামী আন্দোলনের নেতা ডা. নাসির উদ্দিন, সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সভাপতি এম. আইয়ুব আলী, আহত আন্দোলনকর্মী আল আমিন সাজ্জাদ, আহত আন্দোলনকর্মী ও যুবদল নেতা কাজী আফতাব উদ্দিন সাজ্জাদ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক গোকল সূত্রধর মানিক, আহত আন্দোলনকর্মী ফুয়্দা নাঈম প্রমুখ।
আহত শ্রাবণ ময়মনসিংহ নগরীর পুলিশ লাইন এলাকার বাসিন্দা। তিনি আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী। বিগত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গণভবনে মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে শ্রাবণ গুলিবিদ্ধ হন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত-নিহতদের কল্যাণে কাজ করতে চাই। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা কাজ শুরু করেছি। এক্ষেত্রে একটু সময় লাগবে। তবে আহত ও নিতহদের পরিবার যেন আজীবন সম্মান পায় সেজন্য আমাদের সচেষ্ট থাকব।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মুফিদুল আলম বলেন, এই দেশ যতদিন আছে, ততদিন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ও শহীদদের স্মরণ রাখবে মানুষ। তাদের সহযোগিতায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমরা কাজ করছি। অচিরেই সরকারিভাবে তাদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
দেশে ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে ডিসি আরও বলেন, বর্তমান সরকারকে বিব্রত করতে একটি চক্র ষড়যন্ত্র করছে। এই অবস্থায় কেউ যেন সীমালঙ্ঘন না করি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের আত্মত্যাগের স্পিরিটকে ধরে রেখে আমার দেশের কল্যাণে কাজ করতে চাই। এক্ষেত্রেও সবাইকে সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে।
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনটি শহীদ পরিবার এবং ২০ জন আহত আন্দোলন কর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করেন উপজেলা প্রশাসন। সর্বশেষ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের মাগফেরাত কামনায় এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় মোনাজাতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল হক প্রিন্স।
মো. আমান উল্লাহ আকন্দ/এএমকে