অবাধ ও নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন দেওয়াই এ সরকারের প্রথম কাজ
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, হাসিনা বলেছিল চিরদিন দরকার শেখ হাসিনার সরকার। এখন তো দেখি আপনারা বলা শুরু করতে চাচ্ছেন চিরদিন দরকার সংস্কারপন্থি সরকার।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে ফরিদপুর শহরের আলীপুর মোড়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি, কৃষি ফসলের লাভজনক দাম, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণা, গ্রাম-শহরে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা, অবিলম্বে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার করে জাতীয় নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণার দাবিতে এ জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এই সরকারকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা হচ্ছে সফলভাবে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করে অবাধ নির্বাচন করতে যা যা দরকার তা করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া। এর জন্য আপনাকে সময় বেঁধে দিতে হবে।
‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে দেশে এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক পটভূমির সৃষ্টি হয়েছিল’-মন্তব্য করে তিনি বলেন, মাত্র সাড়ে তিন মাসের মধ্যে তা বদলায় গেছে।
‘শুধু ছাত্রসমাজের আন্দোলনে কিংবা কয়েক দিনের আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটেনি’-মন্তব্য করে তিনি বলেন, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর মানুষ অত্যাচার সহ্য করে একটি বারুদের বক্সে পরিণত হয়েছিল। ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলন সেই বারুদকে জ্বালিয়ে দেয়। কোটাবিরোধী না হলে অন্য ইস্যুতে আন্দোলনেও এটা সম্ভব হতো, কেননা দেশের কুলি, মজুর, শ্রমিক এ পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় বুক বেঁধে বসেছিল। এ আন্দোলনের মাধ্যমে তাই দেশের মেহনতি মানুষের কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি ঘটেছে।
তিনি বলেন, যে রক্তের মাধ্যমে এ বিজয় পেয়েছি তা হারিয়ে যেতে দেব না। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার এ মাটিতে আর আসতে পারবে না। এর মানে এই নয় নতুন করে ফ্যাসিস্টের জন্ম হবে না। এজন্য এমন এক ব্যবস্থা আমাদের করে যেতে হবে যাতে নতুন করে এ দেশে ফ্যাসিস্টের জন্ম না হয়।
ইউনূস সরকারের সব ইতিবাচক কাজে সমর্থন দেবে সিপিবি মন্তব্য করে মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, এ সরকার বিপ্লবী সরকার নয়, অন্তবর্তীকালীন সরকার। অবাধ নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন সৃষ্টি করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়াই হবে এ সরকারের প্রথম কাজ।
শ্রমিকদের কাজের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, শ্রমিকদের দুইভাবে তাদের মূল্য পরিশোধ করা হয়। একটাকে বলে ‘টাইম রেট’ আট ঘণ্টা কাজ করবা মাস শেষে বেতন পাবা। আরেকটা আছে ‘পিস রেট’। আট ঘণ্টা কাজ করো আর দুই ঘণ্টা কাজ করো আমি দেখতে প্রস্তুত না, তুমি ১০টা শার্ট বানিয়ে দিবা এটাই কথা।
‘আপনার সরকার হল পিস রেটের সরকার’-মন্তব্য করে মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, কতগুলো কাজ করতে হবে, কাজগুলো করে একটা নির্বাচনের দিকে চলে যান। ভুলে যাবেন না আপনার সরকার অনির্বাচিত সরকার। গণ-অভ্যুত্থানের জাগরণ আপনাকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে। সেটাও আইনের চোখে একটা ন্যায্য ম্যান্ডেট।
তিনি বলেন, কিন্তু সেই ম্যান্ডেটের কতগুলো চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য আছে। আপনি শপথ নিয়েছেন একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার হিসেবে। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেন সব সংস্কার না করে আমরা যাব না। সব সংস্কার মানে কী? সব সংস্কার করতে আপনি পারবেন? ১০ বছর পরও তো দুনিয়া ও দেশের অবস্থা একটু বদলাবে, আপনাকে সংস্কার করতে হবে। ২০ বছর পর বদলাবে আপনাকে সংস্কার করতে হবে। ৩০ বছর পরও আপনাকে সংস্কার করতে হবে। তাহলে হাসিনা বলেছিল চিরদিন দরকার শেখ হাসিনার সরকার। এখন তো দেখি আপনারা বলা শুরু করতে চাচ্ছেন চিরদিন দরকার সংস্কারপন্থি সরকার।
মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, যারা ৭২ সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান করতে চান তাদের মধ্য দুরভিসন্ধি আছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তারা ধ্বংস করে দিতে চায়।
তিনি বলেন, সংবিধান এমনভাবে সংস্কার করতে হবে যাতে জনগণ ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে পারবেন আবার জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করলে তাকে টেনে নামাতে পারবেন।
জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জমি বর্গা দেওয়া যায় কিন্তু স্বার্থ বর্গা দেওয়া যায় না। খালেদা জিয়া, ইউনূস কিংবা সেলিম (মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম) যাকেই দায়িত্ব দিন, দায়িত্ব দিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবেন না। স্বার্থ আদায় করে নেবেন।
জনসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা সিপিবির সভাপতি আজাদ আবুল কালাম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ট্রেড ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা কাজী রুহুল আমীন ও সিপিবির কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রফিকুজ্জামান।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করা হয়। এ মিছিলে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
জহির হোসেন/এমজেইউ