অবশেষে শায়খ আহমাদুল্লাহর দেখা পেলেন ৪৯ দিনে হাফেজ হওয়া হাবিবুর
জুলাই বিপ্লবের সময় হিফজ শুরু করেছিল নোয়াখালীর প্রখর মেধাবী শিশু হাবিবুর রহমান। সে হিফজ শুরু করেছিল ১৯ জুলাই থেকে, শেষ হয়েছে ৫ সেপ্টেম্বর। কোরআন হিফজ করতে তার সময় লেগেছে মাত্র ৪৯ দিন। এই শিশু হাফেজের স্বপ্ন দেশের জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক শায়খ আহমদুল্লাহর সঙ্গে দেখা করা এবং তার মতো বড় আলেম হওয়া।
অবশেষে শনিবার (২৩ নভেম্বর) স্বপ্ন পূরণ হলো শিশু হাবিবুর রহমানের। সাক্ষাৎ পেলেন জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক শায়খ আহমদুল্লাহর।
এ সময় হাবিবুর রহমানের মা সাজেদা আক্তার ও বাইতুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল হিফজ মাদরাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ কারি শাহাদাত হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে হাবিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন শায়খ আহমদুল্লাহ। তাতে তিনি বলেছেন, মাত্র ৪৯ দিনে হাফেজ হওয়া হাবিবের সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য হলো আজ। মিডিয়া মারফত জানতে পারি, বিরল কৃতিত্বের অধিকারী এই মেধাবী শিশুটি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চায়। এই খবর দেখামাত্র হাবিবের প্রতি বিশেষ স্নেহ ও ভালোবাসা অনুভব করি। সিদ্ধান্ত নিই, বিরল মেধার অধিকারী হাফেজ শিশুটির সঙ্গে কিছু সময় কাটাব। দেশের বাইরে থাকায় তা এতদিন সম্ভব হয়নি। আজ সপরিবারে তাকে ও তার উস্তাদকে অফিসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তার সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়েছি, স্বপ্নের কথা শুনেছি, শুনেছি তার সুন্দর কণ্ঠের তিলাওয়াত।
তিনি আরও লিখেছেন, কুরআন এক মহাসমুদ্র। মাত্র ৪৯ দিনে এই সমুদ্রকে বক্ষে ধারণ করা কুরআনের একটি মু'জিযা। এটি বিরল সৌভাগ্য ও আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া সম্ভব নয়। দোয়া করি, মহান আল্লাহ হাবিবকে কোরআনের যোগ্য খাদেম হিসেবে কবুল করুন। তার উস্তাদকে উত্তম বিনিময় দান করুন।
এর আগে ৩ নভেম্বর ঢাকা পোস্টে ‘হাবিবের স্বপ্ন বড় আলেম হওয়ার, দোয়া নিতে চায় শায়খ আহমাদুল্লাহর’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপরই শনিবার শায়খ আহমাদুল্লাহর সাক্ষাৎ পান এ ক্ষুদে হাফেজ।
জানা যায়, প্রখর মেধাবী হাবিব নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বাইতুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থী। সে সেনবাগ উপজেলার বীজবাগ ইউনিয়নের বালিয়াকান্দী গ্রামের সৌদি প্রবাসী মাইনুদ্দিন রাসেলের ছেলে। সে ২০২২ সালে এক বছর নুরানী পদ্ধতিতে পড়ার পর ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে বাইতুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল হিফজ মাদরাসায় ভর্তি হয়ে নাজেরা (কোরআন দেখে পড়া) পড়ে। এরপর ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ১৯ তারিখে কোরআন শরিফ হেফজ (মুখস্থ) শুরু করে। এরপর ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৪৯ দিনে পুরো কোরআন মুখস্থ করে সে। তারপর শায়খ আহমাদুল্লাহর সঙ্গে দেখা করতে হাফেজ হাবিবুর রহমান প্রতিদিন নিজের প্লাস্টিকের ব্যাংকে টাকা জমিয়েছে।
হাবিবুর রহমানের মা সাজেদা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাবিব শায়খ আহমাদুল্লাহর সঙ্গে দেখা করার জন্য টাকা জমিয়েছে। প্রতিদিন সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলতো আমি হুজুরের সঙ্গে দেখা করতে চাই। হুজুরের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হলে তার আশা পূরণ হবে। আলহামদুলিল্লাহ তার আশা পূরণ হয়েছে। হুজুর তাকে দোয়া করে দিয়েছেন। আল্লাহ যেন আমার ছেলেকে বড় আলেম হিসেবে কবুল করে।
বাইতুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল হিফজ মাদরাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ কারি শাহাদাত হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাবিবুর রহমান একজন বিস্ময়কর বালক। আল্লাহ তাকে কবুল করছেন বলেই মাত্র ৪৯ দিনে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করতে পেরেছে। তার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক শায়খ আহমদুল্লাহর সঙ্গে দেখা করার। হুজুর দেশের বাইরে থাকায় দেখা করতে দেরি হয়েছে। তিনি দেশে এসে হাবিবুর রহমানকে ডেকেছেন তার অফিসে। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। ঢাকা পোস্টসহ সব গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানাই।
হাসিব আল আমিন/এমজে