‘রাতেও মায়ের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলেছে, সকালে এলো মৃত্যুর খবর’
গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের দোতলা বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত তিন শিক্ষার্থীর মধ্যে জোবায়ের আলম সাকিবের (২২) বাড়ি রাজশাহীতে। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলা মুরারিপুর। এ ছাড়া পড়াশোনার সুবাদে নগরীর বাকির মোড় এলাকায় থাকতেন তিনি। সাকিবের মৃত্যুর খবরে পরিবারসহ পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
গাজীপুরের শ্রীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন সাকিব। গত সপ্তাহেই বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে ফিরেছিলেন তিনি।
জানা গেছে, সাকিবের বাবা জাহাঙ্গীর আলম অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। মা ফজলেতুন্নেসা সেফা জেলার পবা উপজেলার মুরারিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এই দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে ছোট ছিলেন সাকিব। বড় মেয়ে নাইমাতুল জান্নাত শিফা একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ফাইনাল দিয়েছেন। শিফা থাকেন শ্বশুরবাড়ি। আর পড়াশোনার জন্য গাজীপুরে থাকতেন সাকিব।
সাকিব রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি এবং রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। দুই পরীক্ষাতেই সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন তিনি। শনিবার (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরের বাকীর মোড়ে সাকিবদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আত্মীয়-স্বজনরা ছুটে এসেছেন সাকিবের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে। সাকিবের বাবা, মা আর বোন গাজীপুরে গেছেন তার মরদেহ আনতে। মাঝে মাঝেই বাড়িটিতে আত্মীয়-স্বজনদের কান্নার রোল উঠছে।
সাকিবের চাচি বিউটি বেগম বললেন, সাকিবের মতো এত ভালো ছেলে আর হয় না। সব পড়ে থাকল, ছেলেটাই আর থাকল না। তার মায়ের নানারকম অসুখ। অসুস্থ মানুষটা এই শোক সইবে কি করে।
তিনি সাকিবের ঘরে নিয়ে গিয়ে দেখালেন, বিছানার ওপর এখনও জায়নামাজ পড়ে আছে। সেলফে সাজানো বই। একটা কম্পিউটার।
সাকিবের স্বজনরা জানান, শিক্ষকদের সঙ্গে পিকনিকে যাবে এ কারণেই পরিবার থেকে অনুমতি দিয়েছিল। রাতেও ফোনে সাবিকের সঙ্গে তার মা কথা বলেছেন। সে সময়েও হাসিমুখে কথা বলেছে সাকিব। কিন্তু কে জানতো সকালে মৃত্যুর খবর আসবে। তার মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রোববার (২৪ নভেম্বর) সকাল ১০টায় সাবিকের গ্রামের বাড়ি মুরারিপুরে জানাজার হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত তিন শিক্ষার্থী হলেন—মোজাম্মেল হোসেন নাঈম (২৪), মুবতাসিম রহমান মাহিন (২২) ও জোবায়ের আলম সাকিব (২২)।
শাহিনুল আশিক/এএমকে