বিএনপি অফিসে হামলার মামলায় শাহজাহান ওমর কারাগারে
থানায় মামলা করতে গিয়ে গ্রেপ্তার ঝালকাঠি-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তমকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আফরোজা বিনতে শহীদের আদালতে তোলা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঝালকাঠি কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক পুলক চন্দ্র রায় বলেন, আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী না দাঁড়ালে এবং পুলিশের পক্ষ থেকে রিমান্ড আবেদন না করা হলে স্বল্প সময়ে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আদালত কম্পাউন্ডে শাহজাহান ওমরকে লক্ষ্য করে ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে পুলিশ বাড়তি নিরাপত্তা দিয়ে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে সকালে রাজাপুর থানায় গ্রেপ্তার দেখায় সাবেক এই সংসদ সদস্যকে।
মূলত, বুধবার রাতে শাহজাহান ওমরের রাজাপুরের বাড়িতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। খবর পেয়ে সকালে তিনি রাজাপুরে যান। পথিমধ্যে পিংড়ি এলাকায় তার ব্যক্তিগত গাড়িতে হামলা-ভাঙচুর করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময়ে তাকেও লাঞ্ছিত করা হয়। এই ঘটনায় অভিযোগ দিতে রাজাপুর থানায় গেলে তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান ওমর থানায় আসায় বিক্ষুব্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরা থানার বাইরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন। পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয় এবং কাঁঠালিয়া থানার একটি মামলার প্রধান আসামি হিসেবে শাহজাহান ওমরকে গ্রেপ্তার করেছি।
শাহজাহান ওমর যে অভিযোগ নিয়ে থানায় এসেছিলেন তা কি গ্রহণ করা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, বাড়ি ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ নিয়ে থানায় এসেছিলেন শাহজাহান ওমর। সেই অভিযোগ এখনো গ্রহণ করা হয়নি। নির্দেশনা পেলে সেটিও অভিযোগ হিসেবে গ্রহণ করা হবে।
নির্দেশনা কোথা থেকে আসবে জানতে চাইলে এর সরাসরি কোনো উত্তর দেননি ওসি।
রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকন বলেন, কারা তার (শাহজাহান ওমর) বাসভবন ও গাড়িতে ইট নিক্ষেপ করেছে, তা আমার জানা নেই। যে মামলায় শাহজাহান ওমরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সেই মামলার বাদী কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিজাম। বুধবার রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলায় বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির অফিস শাহজাহান ওমরের নেতৃত্বে আরও আটজন নামধারী আসামি হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ৩ লাখ টাকার ক্ষতি করে।
ঝালকাঠি আইনজীবী সমিতির যুগ্মসম্পাদক শামীম আলম বলেন, ঝালকাঠির লাখো বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে বেঈমানি করে তিনি আওয়ামী লীগে চলে গেলেন। এ অঞ্চলে ওস্তাদ খ্যাত ওমরের এক সময়ের শিষ্যরা আজ আদালতে আনা-নেওয়ার সময় ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করে তাকে উপযুক্ত জবাব দিয়েছে।
তবে গ্রেপ্তারের পর শাহজাহান ওমর গণমাধ্যমে বলেন, আমি গ্রামের বাড়িতে বোনের কবরস্থানে কাজ করাতে এসে হামলার শিকার হয়েছি। আমার গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকনের নেতৃত্বে আমার বাড়ি ও গাড়িতে হামলা হয়েছে। ইচ্ছে ছিল লেবুখালী ক্যান্টনমেন্টে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার। কিন্তু এখন তো আমার গাড়ি নাই, কীভাবে সেখানে যাবো। আমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় থানায় আসছিলাম মামলা দিতে। পুলিশ বলছে, কাঁঠালিয়া থানার একটি মামলায় আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু আমি মামলার বিষয়ে জানতাম না। আমি এসব মামলায় ভয় পাই না। আমি আবারো এই দেশে এমপি-মন্ত্রী হবো লিখে রাখেন।
উল্লেখ্য, বিএনপির মনোনয়নে চারবার ঝালকাঠি-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শাহজাহান ওমর। হয়েছেন প্রতিমন্ত্রীও। গত ১/১১ সরকারের সময় আত্মগোপনে থাকাকালে দুর্নীতির মামলায় স্ত্রীসহ শাহজাহান ওমরের ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে দীর্ঘদিন সরাসরি রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন। দুর্নীতির মামলার রায় স্থগিত রাখাসহ নতুন করে মামলা-মোকাদ্দমা থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখতে গোপনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এমপি নির্বাচিত হন।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এএমকে