শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতেই হবে ছাত্রদলের ভবিষ্যৎ রাজনীতি
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেছেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের বাইরে বাংলাদেশ ছাত্রদল কোনো রাজনীতি করবে না ও অতীতেও করেনি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে মতামত দেবে সেই মতামতের ভিত্তিতেই বাংলাদেশ ছাত্রদলের ভবিষ্যৎ রাজনীতি পরিচালিত হবে।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুপুর ১টায় রাজবাড়ী সরকারি কলেজে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে রাষ্ট্রকাঠামো বাস্তবায়নে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ছাত্রদল সেক্রেটারি নাসির বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিকে যাতে আরও ইতিবাচক ও কল্যাণকর করা যায় সেই লক্ষ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাত্রদলকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্তের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতি পরিচালিত করতে বলেছেন। যা অতীতেও পরিচালিত হয়েছে। আমরা মনে করছি বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ছাত্রদলের রাজনীতি চলবে। বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের বাইরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল অতীতের মতো ভবিষ্যতেও কোনো রাজনীতি করবে না।
তিনি বলেন, আমরা মনে করছি ২১ শতকভিত্তিক একটি মেধাভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি বিনির্মাণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সব সময় বদ্ধপরিকর ছিল এবং অংশীদারিত্ব হতে চায়। বাংলাদেশে গত সাড়ে তিন মাসে ক্যাম্পাসগুলোতে দখলদারত্বের যে গতানুগতিক রাজনীতি সেটি চিরতরে বন্ধ হয়েছে। জোর করে মিছিলে নেওয়া ও গেস্ট রুম কালচারের মতো যে ভয়াবহ রাজনীতি সেটি বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পরে গত সাড়ে তিন মাসে ৩০০ বেশি নেতাকর্মীকে আমরা বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছি, শোকজ করেছি। শুধু বহিষ্কারের ও শোকজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি আমাদের দলের পক্ষ থেকে মামলা করে তাকে গ্রেপ্তার করানো হয়েছে। সেই তথ্য গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। আমরা শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে জিরো টলারেন্স পলিসিতে আছি। কোনো নেতাকর্মী যদি সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন ছাত্রদলের কেউ যদি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে তার বিরুদ্ধে শুধু বহিষ্কার নয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে।
গত সাড়ে ১৫ বছরে বাংলাদেশের যে ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছিল সেই ফ্যাসিবাদের মুখ্য হাতিয়ার ছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। তারা যে গতানুগতিক, লেজুড়বৃত্তিক ও দখলদারত্বের রাজনীতি কায়েম করেছিল তার বিপরীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ২১ শতক উপযোগী একটি মেধাভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি বিনির্মাণ করার কাজ করছে। এতে ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের রাজনীতির অংশীদারিত্ব করছে, আমরা মনে করছি এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের খুব কাছাকাছি একটি পছন্দের ছাত্র সংগঠন হিসেবে পরিচিত লাভ করবে।
তিনি আরও বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর হাসিনার ফ্যাসিবাদে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। সুতরাং জুলাই ও আগস্টে যে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে সেই অভ্যুত্থানে খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এ জন্য অন্যতম কারণ হচ্ছে জনগণ তার পক্ষে মতামত দেয়নি। সব সমস্যার সমাধানের জন্য জনগণের প্রতিনিধির সরকার দরকার। জনগণের প্রতিনিধিত্ব সরকারিভাবে সব সমস্যার সমাধান করতে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই ও আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের ফসল। এই সরকারকে সহযোগিতার কথা বলেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু দল থেকে বলা হয়েছে একটি ন্যায্য সময়ের মধ্যে সংস্কার করে নির্বাচনে ব্যবস্থা করতে হবে।
পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির তার নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাজবাড়ী সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে গাছের চারা রোপণ করেন।
এ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসম্পাদক মুসতাসিম বিল্লাহ অপু, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক মেহেদী হাসান, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম রোমান, সদস্য সচিব মো. শাহিনুর রহমান শাহিন, যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফারুক, মো. আসজাদ হোসেন আজাদ, রাসেল শেখ,সরকারি কলেজ ছাত্র দলের সভাপতি টোকন মণ্ডলসহ জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির রাষ্ট্র কাঠামো বাস্তবায়নের ৩১ দফা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিত করেন ও শিক্ষার্থীদের মতামত নেন। শিক্ষার্থীরাও প্রাণ খুলে তাদের অতীত ও বর্তমান অভিজ্ঞতা নিয়ে সংগঠনের নেতাদের কাছে তুলে ধরেন।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এএমেক