অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পেয়ে ইউএনওর কাছে কৈফিয়ত চাইলেন বিএনপি নেতারা
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় শহীদ পরিবারদের নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত স্মরণসভায় বিএনপির স্থানীয় নেতাদের আমন্ত্রণ না দেওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে কৈফিয়ত চাইতে যান স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা। এ সময় তাদের কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে অডিওটি ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে, সোমবার (১৮ নভেম্বর) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুমকে তার অফিস কক্ষে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কে এম হুমায়ুন করিবসহ স্থানীয় বিএনপি নেতারা কৈফিয়ত চাইতে গিয়ে ওই কথাগুলো বলেন।
ইউএনও আবদুল কাইয়ূম ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কে এম হুমায়ুন করিব ইউএনওর কার্যালয়ে যাওয়ার কথা ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ইউএনওর সভাকক্ষে একটি সভার আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। সভায় শহীদ পরিবারের স্বজন, শিক্ষার্থী, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন। এতে বিএনপির নেতাদের আমন্ত্রণ না করায় ক্ষুব্ধ হন দলটির স্থানীয় নেতারা।
এদিকে ৩ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের ছড়িয়ে পড়া অডিওতে ইউএনওর উদ্দেশে বিএনপির নেতা হুমায়ুন কবিরকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার কি বয়স কম, আমার বয়স ৫৪ চলে। আমি স্টুডেন্ট পলিটিকস করেছি ৯৬ সাল থেকে। আমি একটা কাগজ পাঠাইছি, সে আমার লোকরে আইন দেখায়। এরা আওয়ামী লীগ করে। আওয়ামী লীগ আমাদের হেডেক না, প্রশাসনের হেডেক ও গভর্নমেন্টের হেডেক। গভর্নমেন্টের টার্গেট ৪ বছর থাকবে। আওয়ামী লীগ থাকলে তো হ্যারা থাকতে পারবে না।
আপনি জানেন না, আমি যেবার ইলেকশনে দাঁড়াইছি, পৌরসভায় ভোটে আমি হইয়া গেছি। যারা ভোট দেতে পারবে না, হ্যারাও আমারে ভোট দেতে আইছে কিন্তু কোনো লাভ নাই। আগামী নির্বাচনে অগো ভোট লাগবে না। আমাগো যে ভোট আছে, হেইয়াই তো লাগবে না। মাইনষে অগো ভোট দেবে নাহি। দেবে আমাগো, নাইলে জামাতরে। জামাত যদি অইয়া যাইতে পারে, আমাগো আপত্তি নাই।’
এ সময় অন্য একজন ইউএনওকে বলেন, ‘আমাগো বিএনপিতে কিন্তু কোনো পার্ট নাই, ভাগাভাগি নাই। সময়কালে আমরা সবাই এক। পার্ট অইয়া আমরা যতই বদমাইশি করি, হেইডা ভিন্ন জিনিস।’
আরও পড়ুন
আরেকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘এখন কথা অইলো জাতীয় যত প্রোগ্রাম হইবে, সেইখানে আমাদের প্রতিনিধিত্ব কীভাবে এনশিওর করবেন, সেটা আপনাকে করতে হবে। না করলে আমরা কিন্তু আপনাকে বিব্রত করতে আসি নাই। আমরা আমাদের দাবিদাওয়া নিয়ে আসছি। আমরা নিজেরাই বিব্রত।’
এ সময় ইউএনও আবদুল কাইয়ূমকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তো এখানে কাউকে ডেকে আনিনি। এখন এখানে যদি কেউ আসে, আমি কি বলব আপনি যান?’
ইউএনওকে বক্তব্য শিখিয়ে দিতে বিএনপি নেতাদের একজন বলেন, ‘আপনি বলবেন, এইভাবে বলবেন, আপনার এখানে কী কাজ বলেন।’
এ বিষয়ে মঠবাড়িয়া পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কে এম হুমায়ুন করিব বলেন, গত সোমবার শহীদের পরিবারদের নিয়ে একটি প্রোগ্রাম ছিল উপজেলা প্রশাসনের। সে অনুষ্ঠানে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে ইউএনও দাওয়াত দেননি। ইউএনও উপজেলার গত ৫ আগস্টের পর থেকে যারা এ বিপ্লবের বিরোধিতা করছে তাদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে আসছেন। এ বিষয়ে আমরা পৌর বিএনপির নেতরা তার সঙ্গে কথা বলার জন্য সেদিন সন্ধ্যার পরে তার অফিসে গিয়েছিলাম, যেন পরবর্তীতে আমাদের দাওয়াত দেওয়া হয়। এর বাইরে কোন কিছুই হয়নি।
মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম বলেন, তারা সরকার পতনের পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের দাবি দাওয়া নিয়ে এসেছেন। তার মধ্যে যেগুলো রাখা যায় সেগুলো সবই রেখেছি। গত সোমবার বিপ্লবে শহীদদের পরিবারদের সঙ্গে সরকারিভাবে ছাত্রদের নিয়ে একটি প্রোগ্রাম ছিল। সেখানে বিএনপিকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। এ কারণে তারা সন্ধ্যার পরে আমার অফিসে আসেন এবং কেন এ প্রোগ্রামে তাদের বলা হয়নি তার কৈফিয়ত চান। আমরা বর্তমানে এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সরকারি নির্দেশনার বাইরে তো আর কিছু করা যায় না। তবে এ অডিও কীভাবে ভাইরাল হলো তা আমি ঠিক বলতে পারছি না।
শাফিউল মিল্লাত/এফআরএস