ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক ছয় এমপিসহ ১০৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার ঘটনায় সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকসহ ১০৬ জনের নামে নাশকতার মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাতে জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইব্রাহিম আহমেদ ওরফে শাহীন বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলার বাদী ইব্রাহিম আহমেদ ওরফে শাহীন শহরের কান্দিপাড়ার বাসিন্দা।
মামলার উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন, উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সহধর্মিণী, মাউশির সাবেক মহাপরিচালক ও ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ট্রেজারার প্রফেসর ফাহিমা খাতুন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ.বি তাজুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (আশুগঞ্জ-সরাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাইন উদ্দিন মঈন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ এ.কে একরামুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র হেলাল উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মিসেস নায়ার কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম খোকন, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডিউক চৌধুরী, সদস্য ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি হাসান সারোয়ার, জেলা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শাহ আলম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম.এ.এইচ মাহবুব আলম, কসবা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুস্তম খাঁ প্রমুখ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট জেলার গভ. মডেল গার্লস হাই স্কুলের সামনে ছাত্রদলের আহ্বায়কের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। সেই সময় সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী মোকতাদির চৌধুরী, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক সংসদ সদস্য একরামুজ্জামানের নির্দেশে মামলার আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা ৪০/৫০ জন আন্দোলকারীদের প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে দা, লাঠি, লোহার রড, কিরিজ, পিস্তল, বল্লম, পেট্রোল, কেরোসিন, ককটেল, হাতবোমা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে চর্তুদিকে ঘেরাও করে। মোকতাদিরের নির্দেশে আসামিরা আন্দোলনরত কয়েকজন স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছাত্রীদের চুলের মুষ্টি ধরে লোহার রড, বাঁশের লাঠি দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। তারা মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ করে ঘটনাস্থলে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। এ সময় ককটেলের স্প্রিন্টারের আঘাতে ছাত্রদলের আহ্বায়কসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এ ছাড়া আসামিরা ঘটনাস্থলে থাকা পাঁচটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলে। এদিক-সেদিক পালানোর চেষ্টা করলে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাটিতে ফেলে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, লাথিসহ বুকের ওপর উঠে আঘাত করে। আসামিরা হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে গুলিও করে। গুলির আঘাতে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীসহ পথচারী অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ছাত্রদলের আহ্বায়ক বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় দুইজন মন্ত্রী, একাধিক সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগের ১০৬ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
মাজহারুল করিম অভি/এমজেইউ