হত্যা করে মাটিচাপা, এক যুগ পর ৮ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
নেত্রকোণায় আলোচিত কৃষক হত্যা মামলায় আটজন আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন জেলা দায়রা জজ আদালত। এ ছাড়াও এই মামলায় দুটি ধারায় প্রত্যেককে ২৫ হাজার করে টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
রোববার (১৭ নভেম্বর) বিচারক মো. হাফিজুর রহমানের আদালত এ রায় দেন।
এর আগে ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার পশ্চিম নন্দেরছটি গ্রামের আ. মোতালেবের ছেলে আব্দুর রফিক (২৮) ওরফে রহিতকে হত্যা করে পাটের বস্তায় ভরে মাটি চাপা দেওয়ার মামলায় আসামিদের এই সাজা দেওয়া হয়।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—ইসমাইল, কাজল মিয়া, মজিবর রহমান, আশ্রব আলী, ছামেদুল, শাহজাহান, নজরুল, নূরুল আমিন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবুল হাশেম ঢাকা পোস্টকে রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নেত্রকোণা আসামির পক্ষের কৌঁসুলি হিসেবে ছিলেন জাহিদুল হাসান সৈকত।
মামলার বিবরণীতে জানা যায়, অভিযোগকারী পশ্চিম নন্দেরছটি গ্রামের আব্দুল মোতালেব ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি দূর্গাপুর থানায় গিয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, তার ছেলে মো. আব্দুর রফিক (২৮) ওরফে রোহিত আনুমানিক ১১ বছর যাবৎ স্থানীয় কাকড়াকান্দা বিল এলাকায় তার শ্বশুরবাড়ি-সংলগ্ন আলাদা বসতবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিলেন।
২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) রাত সাড়ে ৭টার দিকে তার ছেলে আব্দুর রফিক বোরো ক্ষেতে পানি সেচ দেওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। কিন্তু সারা রাত সে বাড়ি না ফেরায় পরদিন সকালবেলা তার স্ত্রী মঞ্জুরা খাতুনসহ আশপাশের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে ২৫ জানুয়ারি বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে স্থানীয় চিনাকুড়ি বিলের রাস্তার উত্তর পাশে বড় ধানখেতে পাটের বস্তা ভরা অবস্থায় এবং খেতের কাঁদার নিচে চাপা দেওয়া অবস্থায় রফিকের মরদেহ পাওয়া যায়। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি দূর্গাপুর থানাকে অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
মামলার বিবরণী থেকে আরও জানা যায়, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে মেম্বার পদপ্রার্থী হাবিবুর রহমানের পক্ষে কাজ করেছিলেন নিহত রফিক। আর আসামিরা বিরোধী পক্ষ তুতা মেম্বারের পক্ষে নির্বাচনী কাজ করেন। উক্ত নির্বাচনে মো. হাবিবুর রহমান নির্বাচিত হন এবং তুতা মেম্বার পরাজিত হন।
এই বিষয় নিয়ে আসামিগণ রফিকের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন এবং তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন। ঘটনার দিন বিকেলে রফিকের সঙ্গে আসামিদের তর্ক হয়। ওইদিন রাতেই রফিককে হত্যা করে মরদেহ গুম করে রাখা হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবুল হাশেম বলেন, আজ সোমবার জেলা ও দায়রা জজ নেত্রকোণার দূর্গাপুরে কৃষক হত্যা মামলায় ইসমাইলসহ আটজনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন। এই মামলাটি অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর মামলা। মামলায় মোট ১১ জন সাক্ষী হন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা প্রমাণিত হওয়ায় জেলা ও দায়রা জজ আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এটা ছিল একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এ সমস্ত হত্যাকাণ্ডে মোকদ্দমায় সাজা হওয়ার কারণে সমাজে এর প্রবণতা কমবে। আর যেন এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা না ঘটে, এই প্রত্যাশাই করি।
চয়ন দেবনাথ মুন্না/এএমকে