নবান্নে মাছের মেলা, জমজমাট কেনাবেচা
দোকানে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। বড় বড় আকারের মাছ। দামও বিভিন্ন রকম। ক্রেতারা আসছেন, দরদাম করছেন, কিনছেন। নবান্ন উৎসব উপলক্ষ্যে এক দিনের মাছের মেলায় এমন চিত্র দেখা গেছে। জয়পুরহাটের কালাই পৌর শহরের পাঁচশিরা বাজারে রোববার (১৭ নভেম্বর) ভোর থেকে বসেছে এই মেলা। বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম উৎসব নবান্ন উপলক্ষ্যে বসা মাছের এই মেলাকে ঘিরে এলাকাবাসীর মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নবান্ন উপলক্ষ্যে পঞ্জিকা অনুসারে প্রায় এক যুগ আগে থেকে প্রতিবছর অগ্রাহয়ণের নবান্নের দিন এ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় বড় বড় দেশীয় প্রজাতির মাছ কেনাবেচা হয়। মেলা উপলক্ষ্যে এলাকার জামাই-মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনদের নিমন্ত্রণ করা হয়। জামাই ও শ্বশুররা মেলা থেকে বড় বড় মাছ কিনেন। এবার আমন ধানের দাম ভালো থাকায় মেলায় বড় মাছ কেনাবেচা বেশি হচ্ছে। মেলায় সর্বোচ্চ ১৯ কেজি ওজনের কাতল মাছ উঠেছিল। সেটি ২১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ১০-১২ কেজি ওজনের নানা প্রজাতির মাছ উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রঙিন কাপড়ে ঘেরা বিশাল প্যান্ডেলের ভেতরে চৌকিতে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে দেশীয় নানান প্রজাতির বড় বড় মাছ। ছোট থেকে মাঝারি আকারের মাছও রয়েছে। এসব মাছের দোকানগুলোর সামনে ঝুলছে নানান রঙের বেলুন। দোকানগুলোতে বড় বড় রুই, কাতলা, বিগ্রেড, সিলভারকার্প, কালবাউশসহ সব প্রজাতির মাছ রয়েছে। ভোর থেকেই এসব মাছ নিয়ে সারি বেঁধে দোকান নিয়ে বসেন মাছ বিক্রেতারা। মাছ ব্যবসায়ীরা দাম হাঁকছেন আর ক্রেতারা দরদাম করছেন। লোকজনও ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে মাছ কিনেছেন। অনেকেই আবার মেলা দেখতে এসেছেন।
মেলার পাশের পাঁচ গ্রামে বেড়াতে এসেছেন রুবিনা বেগম। তিনি বলেন, পাঁচগ্রামে স্বামীকে নিয়ে মাছের মেলায় ঘুরতে এসেছি। পাঁচশিরা মাছের মেলাটির নাম আগেই থেকে জানি। কিন্তু কখনো আসা হয়নি। মেলায় এসে বড় বড় মাছ দেখছি। অনেক ভালো লাগছে। ঘুরে ফিরে মেলা থেকে স্বাদ ও সাধ্যের কথা মাথায় রেখে পছন্দের একটি বড় মাছ ৩২০০ টাকায় কিনলাম।
মেলায় মাছ কিনতে আসা শাহিনুর রহমান শাহিন নামে এক যুবক বলেন, অন্য বছরের চেয়ে এবার মেলায় বড় মাছের আমদানি অনেক বেশি। মেলা থেকে ৮ কেজি ওজনের একটি কাতল মাছ কিনে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।
নান্দাইল দীঘি এলাকার মোজাফ্ফর তালুকদার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নবান্ন উপলক্ষ্যে পাঁচশিরা বাজারে বড় মাছের মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এটি এখন এ এলাকার ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। তাই আশপাশের লোকজন মাছ কিনতে এ মেলায় ছুটে আসেন। আমি ২৪ কেজি পাঁচটি রুই ও সিলভার কাপ মাছ কিনেছি। মেলা উপলক্ষ্যে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করেছি।
মেলায় মাছ বিক্রেতা রায়হান আলী বলেন, মাছের মেলাতে বড় পুকুর, দীঘি ও নদী থেকে নানা জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে। বড় কাতল মাছ এক হাজার ও মাঝারি সাইজের ১০ কেজির নিচে কাতল মাছ ৬৫০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার ক্রেতা বেশি। তাই মাছও বিক্রি হচ্ছে বেশি।
পাঁচশিরা হাট-বাজার ইজারাদারের প্রতিনিধি গোলাম আজম বলেন, নবান্ন উপলক্ষ্যে প্রতি বছর একদিনের মাছের মেলার আয়োজন করা হয়। মাছ ব্যবসায়ী দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বড়-বড় মাছ সংগ্রহ করে মেলায় নিয়ে আসেন। এবার মেলায় মাছ বেচাকেনা খুব ভালো হচ্ছে।
কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম বলেন, এই মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আর এই মেলা উপলক্ষে স্থানীয় বড় মাছ ব্যবসায়ী এবং মাছ চাষিরা বিভিন্ন এলাকা থেকে সপ্তাহখানেক ধরে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে থাকেন। মেলায় কেউ যেন বিষযুক্ত মাছ বিক্রি করতে না পারে, সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে।
কালাই থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন, দীর্ঘদিন ধরে নবান্ন ঘিরে কালাই পৌর শহরের পাঁচশিরা বাজারে একদিনের মাছের মেলা বসছে বলে জেনেছি। মাছের মেলাটি ওই এলাকার ঐতিহ্য। মেলার নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
চম্পক কুমার/আরএআর